বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

ফাটাকেষ্টর কালীপুজো, বাংলার প্রথম ব্র্যান্ডেড পুজো

October 23, 2022 | 3 min read

ফাটাকেষ্টর কালীপুজো, ছবি সৌজন্যেঃ আজ বাংলা

সাতের দশকের কলকাতা, উত্তরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কেষ্ট। কেষ্টা কো পকড়না মুশকিল হি নেহি, না মুমকিন হ্যায়। ছুরির কোপ পেরিয়ে, যুযুধান দুই পক্ষের লড়াইয়ে জিতে গিয়েছিলেন এক যুবক। মেডিক্যাল কলেজ থেকে ফেরার পর, পাড়ায় তার নাম হল ফাটাকেষ্ট। কয়েকটা ছুরির কোপেই কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত হয়ে উঠলেন ফাটাকেষ্ট। কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত কালীপুজোগুলির মধ্যে একটি হল ফাটাকেষ্টর কালীপুজো। উত্তর কলকাতার সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের নবযুবক সংঘের পুজো ফাটাকেষ্টর পুজো নামে বিখ্যাত। শুধু উত্তর কলকাতাই নয়, ভারতজুড়েই ছড়িয়ে আছে ফাটাকেষ্টর নাম। বহু বড় মাপের সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতাসহ অন্যান্য তারকারা এই পুজোয় সামিল হয়েছেন। এমনকি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও একবার এই পুজোর উদ্বোধনে এসেছিলেন। ফাটাকেষ্টর বর্ণময় জীবনের মতোই এই পুজোর ইতিহাসও বহুবর্ণময়।

May be an image of 3 people and people standing
ফাটাকেষ্টর কালীপুজো উদ্বোধনে এসেছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, ছবি সৌজন্যেঃ ফেসবুক/ Ramen Paul

ফাটাকেষ্টর উত্থান এক নির্ভীক রক্ষাকর্তার মতো ছিল। তিনি ছিলেন রবিন হুড। পাড়া-পড়শিদের বাঁচাতে সর্বদা ঢাল হয়েছিলেন তিনি। শোনা যায়, মাঠে-ময়দানে বোমাবাজি, গুলি ছোঁড়া ছিল তাঁর জলভাত। আবার রাতের সিনেমার শো দেখে বাড়ি ফেরা পাড়ার মেয়েদের রক্ষা করতে ছুটে যেতেন, নিজের লোকেদের সবসময় কড়া পাহারা দিতে বলতেন। সত্তর দশকের কলকাতায় এক হিরোর মতো আবির্ভাব ঘটছিল ফাটাকেষ্টর। ১৯৫০-এর দশকে সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের কাছে বাবার পানের দোকান সামলাতেন তিনি। পড়াশোনা বিশেষ জানতেন না, শরীরচর্চার শখ ছিল। কালীর ভক্ত ছিলেন তিনি। ফাটাকেষ্টই পরবর্তীকালে বিখ্যাত কালীপুজো শুরু করেন। নরেন সেন স্কোয়ারের কাছে তিনি গড়ে তোলেন নবযুবক সংঘ ক্লাব। সত্তর দশকের গোড়াতেই এই ক্লাবের পক্ষ থেকেই পুজো শুরু হয়।

ফাটাকেষ্টর কালীপুজো, ছবি সৌজন্যেঃ ফেসবুক/সর্বানী গোস্বামী মুখার্জী

ফাটাকেষ্টর কালীপুজোর (Fatakesto Kali Puja) সবথেকে বড় আকর্ষণের দিক ছিল বড় বড় তারকা শিল্পীদের যাতায়াত। উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, রাজেশ খান্না, লেভ ইয়াসিন, বিনোদ খান্না, জিতেন্দ্র, মালা সিনহা, আশা ভোঁসলে প্রমুখদের মতো অবিস্মরণীয় সব শিল্পীরা পুজোয় আসতেন। কালীপুজোকে কেন্দ্র করে জলসাও বসত। ১৯৭৪-৭৫ সাল নাগাদ পুজোর শুরুর দিকেই কলেজ স্ট্রিট বাটা থেকে আর্মহার্স্ট স্ট্রিট পর্যন্ত সমগ্র এলাকা আলোয় মুড়ে ফেলা হত। মাথার উপর বড় বড় ঝাড়বাতি থাকত। পুজোর ভাসান নিয়ে সোমেন মিত্রের পুজোর সঙ্গে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা হত ফাটাকেষ্টর পুজোর।

May be an image of 8 people and people standing
ফাটাকেষ্টর কালীপুজোর সবথেকে বড় আকর্ষণের দিক ছিল বড় বড় তারকা শিল্পীদের যাতায়াত, ছবি সৌজন্যেঃ ফেসবুক/ Ramen Paul

তখন পনেরো দিন কালীমূর্তিকে মণ্ডপে রাখতেন ফাটাকেষ্ট। ভাসানের সময় ৬০-৬৫টি গেট তথা তোরণ নিয়ে যাওয়া হত, সঙ্গে থাকত ব্যাণ্ড পার্টি। শোভাযাত্রা হত বিপুল আড়ম্বরে। নিমতলা ঘাটে বিসর্জন হওয়ার আগে সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট থেকে ঠাকুর বেরিয়ে সূর্য সেন স্ট্রিট, আর্মহার্স্ট স্ট্রিট হয়ে মানিকতলা বাজার এবং সেখান থেকে বিডন স্ট্রিট হয়ে ঘুরে আসত এই শোভযাত্রা।

শোনা যায়, একবার নকশালরা ফাটাকেষ্টর উপর রাগ মেটাতে বি.কে পাল অ্যাভিনিউয়ের কাছে রাস্তা আটকে প্রতিমা যেতে দিচ্ছিল না। ফাটাকেষ্টর বুদ্ধিতে ঠাকুর মণ্ডপে ঠিকই চলে আসে, তবে অসম্পূর্ণ অবস্থায়। মণ্ডপে এসে ঠাকুর গড়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়।

ফাটাকেষ্টর কালীপুজো, ছবি সৌজন্যেঃ ফেসবুক/সর্বানী গোস্বামী মুখার্জী

শোনা যায়, অমিতাভ বচ্চন একবার একটি হিরে বসানো সোনার নাকছাবি মা কালীকে উপহার দিয়েছিলেন। এই নাকছাবি পরে চুরি হয়ে যায়। ফাটাকেষ্টর কালীপুজোর যাত্রাপথ সত্যই বিস্ময়কর।১৯৯২ সালে হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে ফাটাকেষ্টর মৃত্যু হলেও, তাঁর পুজো আজও বহমান। আজও সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট সেইসব রোমাঞ্চকর ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখনও কেষ্ট দার নাম, মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। দাপুটে ফাটাকেষ্ট রুপলি পর্দাতেও উঠে এসেছেন। তবে কলকাতা তথা বাংলার প্রথম ব্র্যান্ডেড পুজোর সার্থক রূপকার হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kolkata, #kali puja, #Fatakesto Kali Puja

আরো দেখুন