রাজ্যের একলব্য স্কুলগুলির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে কেন্দ্র, আদিবাসী শিক্ষায় গেরুয়াকরণের ইঙ্গিত?
বরাবরই আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য নানা প্রকারের কৌশল অবলম্বন করে আসছে গেরুয়া শিবির। কখনও গণবিবাহ, আবার কখনও আরএসএস পরিচালিত স্কুল। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগেও রাজ্যে আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলিতে প্রচারে বিশেষ জোর দিয়েছিল বিজেপি। আর তার আগে থেকে বিজেপি’র জন্য জমি তৈরির কাজ করছিল আরএসএস। বিজেপি’র নির্বাচনী ইস্তাহারে আদাবাসীদের জন্য ঢালাও প্রতিশ্রুতিও ছিল।
ভোটে জিতলে আদিবাসী অধ্যুষিত প্রতিটি ব্লকে শুধুমাত্র এই জনগোষ্ঠীর ছেলে মেয়েদের জন্য একলব্য মডেল আবাসিক স্কুল গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পদ্মা শিবির। এবার ফের রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শিক্ষার গেরুয়াকরণের চেষ্টা শুরু হয়েছে। যাতে আদাবিবাসী ভোট ব্যাঙ্কের উপর তারা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।
রাজ্যের সমস্ত একলব্য আবাসিক স্কুলের রাশ সরাসরি নিজেদের হাতে নিতে চাইছে কেন্দ্র। রাজ্যকে বাদ দিয়েই ঠিক করতে চাইছে পাঠ্যক্রম। এই বিষয়ে সম্প্রতি রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্ত একলব্য মডেল স্কুলগুলি কেন্দ্রীয় ভাবে পরিচালনার জন্য একটি সোসাইটি গঠন করেছে মোদী সরকার। এই সোসাইটির মাধ্যমেই আদিবাসীদের এই স্কুলগুলিতে নিয়োগ থেকে শুরু করে পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় নির্ধারণ করতে চাইছে কেন্দ্র।
রাজ্যে এই মুহূর্তে মোট সাতটি একলব্য মডেল আবাসিক স্কুল রয়েছে। ঝাড়গ্রাম, নাগরাকাটা, বুনিয়াদপুর, মুকুটমনিপুর, মানবাজার, বোলপুর এবং কাঁকসার মতো আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় রয়েছে স্কুলগুলি। নতুন একটি স্কুল তৈরি হচ্ছে কালিম্পংয়ে। এর মধ্যে ঝাড়গ্রামের স্কুলের পরিচালনার দ্বায়িত্ব রামকৃষ্ণ মিশনকে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাতটি স্কুলের প্রায় তিন হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনো করে রাজ্যের সিলেবাস মেনেই। শিক্ষক নিয়োগও করে রাজ্য। তবে কেন্দ্রের প্রস্তাব মেনে নিলে, রাজ্যের হাতে আর কোনও ক্ষমতাই থাকবে না।
রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, একলব্য স্কুলগুলির দায়িত্ব পুরোপুরি নিজেদের হাতে নিতে কেন্দ্র রাজ্যের উপর চাপ বাড়াচ্ছে। কেন্দ্রের চিঠিতে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদী গঠিত সোসাইটির অধীনে এলে এই স্কুলগুলির প্রতি পড়ুয়ার জন্য বছরে এক লক্ষ টাকা করে দেবে কেন্দ্র। নচেৎ সন্তুষ্ট থাকতে হবে ৬০ হাজার টাকাতেই। ‘রাজ্যের হাতে এই স্কুলগুলির পরিচালন ক্ষমতা থাকলে পড়ুয়াদের জন্য ৪০ হাজার টাকা করে কম বরাদ্দ করা হবে!
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের এই প্রস্তাব নাকচ করে পাল্টা চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য সরকারও।