লক্ষ্মী মিত্তল ৩৩০০ কোটি দান করলেন করোনা ভ্যাকসিন তৈরিতে
গোটা দুনিয়াটাকে যেন গ্রাস করে নিচ্ছে মারণ ভাইরাস করোনা। সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা দিনরাত কাজ করে চলেছেন করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে। কিন্তু এখনও ফুলপ্রুফ কোনও ভ্যাকসিনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এরই মাঝে এগিয়ে এলেন ভারতীয় ব্যবসায়ী লক্ষ্মী মিত্তল। মানুষকে বাঁচানোর স্বার্থে ভ্যাকসিন তৈরির জন্যে ৩৩০০ কোটি টাকা দান করলেন তিনি!
লক্ষ্মী মিত্তলের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি দিয়েছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিনোলজি বিভাগকে। এই বিভাগটি জেনার ইনস্টিটিউটের অন্তর্গত। জানা গিয়েছে, লক্ষ্মী মিত্তলের ওই অনুদানের পর ইনস্টিটিউটের নামও পালটে দেওয়া হয়েছে। নতুন নাম হয়েছে লক্ষ্মী মিত্তল অ্যান্ড ফ্যামিলি প্রফেসরশিপ অফ ভ্যাকসিনোলজি। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে অক্সফোর্ড ও ইউকে ইনস্টিটিউট ফর অ্যানিম্যাল হেলথের যৌথ অংশীদারিতে তৈরি হয়েছিল জেনার ইনস্টিটিউট। বর্তমানে বিশ্বের যে কটি ভ্যাকসিনকে নিয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO-ও তাকিয়ে আছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের দিকেই। সেই ভ্যাকসিনের কাজ যাতে দ্রুত গতিতে চলে, তার জন্যেই অনুদান দিলেন লক্ষ্মী মিত্তল।
জানা গিয়েছে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত পর্বে রয়েছে। করোনাভাইরাসকে কাবু করতে এই ভ্যাকসিন কতটা কার্যকরী, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভ্যাকসিনটির নাম ChAdOx1 nCoV-19। সংস্থাটি জানিয়েছে, লন্ডনের ১০,২৬০ জন শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কের উপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা ও করোনা বিধ্বস্ত ব্রাজিলে ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল হয়ে গিয়েছে। ভারত-সহ অন্যান্য কম ও মাঝারি আয়ের দেশগুলির জন্য একশো কোটি ডোজ তৈরি করতে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া।
আরও জানা গিয়েছে, ChAdOx1 ভাইরাস থেকে তৈরি করা হয়েছে এই ভ্যাকসিন। এই ভাইরাস থেকেই শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে সংক্রমণ হয়। তবে বংশপরম্পরায় এটি পরিবর্তিত হয়ে যায়। ফলে মানবদেহে কোনও সংক্রমণ হয় না। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের প্রধান প্রফেসর অ্যান্ড্রু পোলার্ড জানিয়েছেন, ‘এই ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা প্রচন্ড আশাবাদী। কিন্তু সবকিছু ঘোষণা করার আগে আমরা দেখে নিতে চাইছি, বয়স্কদের মধ্যে এই ভ্যাকসিন প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে কিনা।’ শুধু তাই নয়, যে সমস্ত দেশের জনসংখ্যা বিপুল সেখানে এই ভ্যাকসিন কোনও সুরক্ষা দিতে পারে কি না, তাও বোঝার চেষ্টা চলছে।
তবে, চিন্তার বিষয় হল, এই ট্রায়াল সফল হলেও চলতি বছরের শেষের দিকের আগে এই ভ্যাকসিন বাজারে আনা সম্ভব নয় বলেই জানা গিয়েছে। তবে, ভ্যাকসিন তৈরির কাজে যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে, সেই কারণে লক্ষ্মী মিত্তলের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য বিশেষ কাজে লাগবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।