অঘটন নাকি লড়াইয়ের ফসল? আর্জেন্টিনা বধের ৩ নায়ক, সালেম-ওয়াইস-রেনার্ড
আজ সৌদি আরবে ছুটি, কারণ গতকাল লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে সে’দেশের ছেলেরা। বিশেষজ্ঞরা একে বিশ্বকাপের অঘটন বলে দেগে দিয়েছেন। কিন্তু সত্যিই অঘটন নাকি অসম লড়াই দাপিয়ে লড়ে নিল এশিয়ার দেশটি। দেখে নিই এই জয়ের তিন নায়ককে-
প্রথমেই বলতে হয় সালেম আল-দাউসারির কথা। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে বামদিক থেকে বাঁক খাওয়ানো শটে গোল করে সকলকে চমকে দেন আর্জেন্টিনা বধের নায়ক সালেম আল-দাউসারি। সালেমের জন্ম জেড্ডায়, ২০১৫ সালে একটি ম্যাচে রেফারিকে মাথা দিয়ে গুঁতো মেরে সংবাদ শিরোনামে আসেন সালেম। জরিমানা হয়। এরপর ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপের আগে জুয়ান আন্তোনিও পিজ্জির নজরে আসেন আল-দাউসারি। ভিয়ারিয়ালে সইও করেন, জীবনের মোড় ঘুরে যায়। রাশিয়া বিশ্বকাপে মিশরের বিরুদ্ধে জয়সূচক গোলটি করেন আল-দাউসারি। সেদিনই সৌদি নায়ক হয়ে গিয়েছিলেন সালেম আল-দাউসারি। কোচ হার্ভে রেনার্ড পরশে সালেম আল-দাউসারি, এক সাধারণ উইঙ্গার থেকে গোল করার কারিগর হয়ে উঠলেন।
দ্বিতীয় নায়ক হলেন, সৌদি আরবের গোলকিপার মহম্মদ আল-ওয়াইস। শেষ ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনার একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত করে, ম্যাচের নায়ক হয়ে গেলেন ওয়াইস। আল হিলালে খেলা ৩১ বছরের তারকা ২০১৮ বিশ্বকাপে সৌদির প্রাথমিক দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। সেবার উরুগুয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচে নেমেয়েছিল ওয়াইস। কিন্তু গতকাল ছিল তাঁর দিন, ওয়াইস আর্জেন্টিনার অন্তত ১৫টা শট সেভ করেছেন। রুখে দিয়েছেন প্রায় নিশ্চিত গোল। গোলের মুখ না খুলতে পেরে হতাশ ও বিরক্ত হয়ে পড়েন মেসি ও তাঁর দল। সেখানেই ছন্দপতন শুরু। তাল কেটে যেতে হারল নীল-সাদা বাহিনী।
এবার আল-দাউসারি, ওয়াইসদের দ্রোনাচার্যের কথাই চলে আসে ফরাসি কোচ হার্ভে রেনার্ড। কথায় বলে পুরনো চাল ভাতে বাড়ে, নিজের হাই প্রেসিং অ্যান্ড হাই লাইন ডিফেন্সের অস্ত্র ব্যবহার করলেন রেনার্ড। নব্বই মিনিট হাই প্রেসিং ফুটবলের জন্যে দরকার চূড়ান্ত শারীরিক দক্ষতা, সেই মতো ছেলেদের শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়ে এসেছেন। একমাত্র কোচ হিসেবে দুবার আফ্রিকা সেরা হওয়ার নজির রয়েছে রেনার্ডের ঝুলিতে, এদিন তিনি ম্যান টু ম্যান মার্কিংয়ের অস্ত্রও ব্যবহার করলেন। এছাড়াও ছিল অফসাইড ট্র্যাপ, ষাটের দশকে বেলজিয়ামের ক্লাব ফুটবলে পিয়ের সিনিবান্ডির মগজ থেকে অফসাইড ট্র্যাপের সূচনা। সৌদি আরব এই অফসাইড ট্র্যাপের অস্ত্র ঠিকঠাক ব্যবহার করল। অফসাইড ট্র্যাপ আর্জেন্তিনাকে মানসিকভাবেও ধাক্কা দিয়েছে।
তবে প্রতিপক্ষকে হালকাভাবে নেওয়াও কাল হল আর্জেন্টিনার। মনে পড়ে যায় ৮৪ সালের নেহেরু কাপের ম্যাচ, বাবু মানি, সাব্বির আলী, প্রশান্ত ব্যানার্জী, বিদেশ বসু, কৃশানুদের ভারতও সেদিন আর্জেন্টিনার পতন ঘটিয়ে ফেলেছিল প্রায়। কিন্তু ভাগ্য সঙ্গ দেয় আর্জেন্টিনার। যে যাত্রায় ১-০ জিতে মান রক্ষা হয়, নয়ত কে বলতে পারে, হয়ত ভারতের সরকারি কর্মীরাও একদিন সবেতন ছুটি পেতে পারত।