রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

রাজীবের তোপে রাঘববোয়াল, অস্বস্তি তৃণমূলে

July 12, 2020 | 3 min read

দুর্নীতি ইস্যুতে প্রকাশ্যে চাঁচাছোলা মন্তব্য করে দলের অন্দরেই আলোড়ন ফেললেন ডোমজুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশ্যে রাজীবের স্পষ্ট মত, ‘দলকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে শুধু চুনোপুঁটিদের এগিয়ে দিলেই হবে না, রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’ দলের জেলা সভাপতি অরূপ রায়ের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে রাজীবের অভিযোগ, উনি সমস্ত সিদ্ধান্ত একক ভাবে নিচ্ছেন। মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী সেভাবে সুযোগ পাননি বলেও কিঞ্চিৎ আক্ষেপ শোনা গিয়েছে এই তরুণ মন্ত্রীর গলায়। তবে সে আক্ষেপ কাটিয়ে উঠে নিজের প্রশাসনিক ও দলীয় দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের বার্তাও দিয়েছেন রাজীব। তাঁর প্রকাশ্য মুখ খোলা নিয়ে দলের অন্দরে শোরগোল পড়ে গেলেও দুর্নীতির প্রশ্নে তিনি তাঁর অবস্থানেই অনড় বলে সাফ জানিয়েছে রাজীব।

দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, রাজীব তাঁর মনোভাব দলের অন্দরে জানালেই ভালো করতেন। তৃণমূলের হাওড়া জেলার পর্যবেক্ষক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের প্রতিক্রিয়া, দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কারও বক্তব্য সংবাদমাধ্যমের কাছে শুনতে চান না, এবং তার প্রেক্ষিতে কিছু বলতেও চান না। রাজীবের কিছু বলার থাকলে তিনি তাঁকে বা সরাসরি দলনেত্রীকে জানাতে পারতেন বলেও মন্তব্য করেছেন ফিরহাদ। অন্যদিকে রাজীবের বিরুদ্ধে পাল্টা মুখ খুলেছেন হাওড়া (সদর) তৃণমূলের সভাপতি তথা মন্ত্রী অরূপ রায়ও। তাঁর দাবি, দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করে দলবিরোধী কাজ করেছেন রাজীব। এই জেলায় পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি স্তরের কয়েকজন পদাধিকারীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে আম্পান-ত্রাণে স্বজনপোষণের অভিযোগে। কিন্তু রাজীব সম্ভবত আরও বড় মাপের চাঁইদের শাস্তির পক্ষে সওয়াল করতে চেয়েছেন।

তবে প্রকাশ্যে মুখ খোলার জন্য দলের একাংশের সমালোচনার মুখে পড়লেও দলেরই অপর অংশ মনে করছে দুর্নীতি প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর আপোসহীন অবস্থানের কথাই উঠে এসেছে তরুণ এই মন্ত্রীর মুখে। নবান্নের সর্বদল বৈঠক থেকে শুরু করে তৃণমূলের সাংগঠনিক সভা, মমতা সর্বত্রই হুঙ্কার ছেড়েছেন, উন্নয়নে বা ত্রাণে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করলে তিনি কাউকেই রেয়াত করবেন না। মমতা মন্ত্রিসভার স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সদস্য রাজীবের ঘনিষ্ঠ মহলের ব্যাখ্যা, দলনেত্রীর সেই লড়াইয়ে তাঁর পূর্ণ সমর্থন আছে বোঝাতেই রাজীবের এহেন মন্তব্য।

শনিবার টিভি ক্যামেরার সামনেই রাজীব বলেন, ‘দুর্নীতিকে দূর করতে গেলে শুধু কয়েকটা চুনোপুঁটিকে এগিয়ে দিলেই হবে না। প্রচুর রাঘববোয়াল, রুই কাতলা ইলিশ আছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’ শুধু সংবাদমাধ্যম নয় এদিন ফেসবুক লাইভেও রাজীব স্পষ্ট জানিয়েছেন, চরম মূল্য দিতে হলেও দুর্নীতির সঙ্গে আপস করতে পারবেন না। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজীবের এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বলেন, ‘তৃণমূলে অনেকেই আছেন যাঁদের মনের মধ্যে অপরাধবোধ তৈরি হয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারছেন না বলে। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবেক হয়তো তাঁকে তাড়না দিচ্ছে। কিন্তু ওখানে থেকে কিছুই করতে পারবেন না।’

রাজীব এ দিন কারও নাম না-করেই বলেন, ‘অনেক সময় যোগ্যতা থাকলেও কাজের সুযোগ পাওয়া যায় না। আমার মনে কিছুটা হলেও আক্ষেপ বা বেদনা আছে। কারণ আমি তো মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলাম। করতে দেওয়া হয়নি। তবে এখন আমি সেই আক্ষেপ মুছেও ফেলেছি।’

তৃণমূলের হাওড়া জেলার পর্যবেক্ষক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের প্রতিক্রিয়া, ‘আমি হাওড়ার পর্যবেক্ষক। এই জেলার দলের কোনও সদস্যের কিছু বলার থাকলে সরাসরি আমাকে বলবেন। মাথার উপর দলনেত্রী আছেন। তাঁকে বলবেন। কিন্তু দলের বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনও রকম আলোচনা করাই অন্যায়। আমি প্রেসের মাধ্যমে আদানপ্রদান করব না। রাজীব যদি কিছু বলে থাকে সেটা আমায় বলবে বা দলনেত্রীকে বলবে।’ মন্ত্রী অরূপ রায়ের বক্তব্য, ‘দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী এভাবে প্রকাশ্যে মন্তব্য করলে সেটা দলবিরোধী কাজের মধ্যেই পড়ে। সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দলকে ফাঁকা করে দিলাম এটাও তো ঠিক নয়। আগে তো দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হতে হবে।’

আম্পানের ক্ষতিপূরণ বিলিকে কেন্দ্র করে পঞ্চায়েত স্তরে শাসকদলের একাংশের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। একই সঙ্গে বিজেপি শাসিত পঞ্চায়েতের সদস্যদের বিরুদ্ধেও তাদের ঘনিষ্ঠ লোকজনকে ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দল বা রং না-দেখে দুর্নীতি দমনের বার্তাই দিয়েছেন বার বার। তাঁর চাপে টাকাও ফেরাচ্ছেন অনেকে। সম্প্রতি দলীয় বৈঠকেও তিনি নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাঁদের দলে তো রাখবেনই না প্রশাসনও ব্যবস্থা নেবে। তবে গত আট জুলাই হাজরা মোড়ে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের নীচুতলায় দুর্নীতিকে বাম জমানায় তৈরি অভ্যাস বা মেকানিজম বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেছিলেন বামেদের সময় পঞ্চায়েতে ১০০ শতাংশ দুর্নীতি হতো এবং তিনি ক্ষমতায় আসার পর তা মাত্র দশ শতাংশে নামিয়ে এনেছেন। ওই অবশিষ্ট ১০ শতাংশ দুর্নীতির প্রবণতা মুছে ফেলতে তাঁকে দিনরাত লড়াই করতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#howrah, #tmc, #Rajib Banerjee, #Arup Roy

আরো দেখুন