বিকল্প পথেই চাঙ্গা হচ্ছে রাজ্য কোষাগার
কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা, তার উপর করোনা মহামারী এবং আম্পানের
জোড়া বিপর্যয়। নয়া অর্থবর্ষের শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ে বিপুল ঘাটতির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে সামাজিক খাতে বাড়তে থাকা খরচ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝে ছিলেন, বিপদে মানুষের পাশ থেকে সরে আসা যাবে না… তাই ঘোরাতে হবে অর্থনীতির চাকা। আর তাতে যোগ্য সঙ্গত করেছে অর্থদপ্তরের বিকল্প নীতি। সেই মাস্টার স্ট্রোকেই হাল ফিরছে কোষাগারের। দপ্তর সূত্রে খবর, এখন প্রায় ৪০ শতাংশ রাজস্ব আদায় করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। অন্যান্য রাজ্যে এই হার ২০ শতাংশেরও কম। এপ্রিলের শেষ দিকে সরকারি অফিস খুলে দেওয়ার সময়েই সম্পত্তির নথির রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা পুরোপুরি অনলাইনে করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলত এই নীতির ফলে লকডাউনের শেষ এবং আনলক পর্বে চাঙ্গা হচ্ছে রাজ্যের অর্থনীতি।
চলতি অর্থবর্ষের বাজেট অনুযায়ী এই অনলাইন স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ আদায় ধরা হয়েছিল মোট ৬ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। এপ্রিল মাসে এই খাত থেকে আদায় সেরকম না হলেও পরে অবস্থাটা পাল্টেছে। গত মে ও জুন মাসে এই খাতে মাসিক আদায়ের ৩০ শতাংশ এসেছে সরকারের ঘরে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আবগারি খাতে আয়। বার-পাব এখনও বন্ধ। সেখান থেকেই বেশি আয় করে আবগারি দপ্তর। কিন্তু মদে অতিরিক্ত কর এবং অনলাইনে সুরা বিপণন শুরু হওয়ায় কিছুটা হলেও পরিস্থিতি ভালো হয়েছে। বাজেট অনুযায়ী চলতি আর্থিক বছরে দপ্তরের ঘরে তোলার কথা প্রায় ১২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। সেই লক্ষ্যমাত্রা এখনও দূরে থাকলেও, এই খাত থেকে মাসে ৩০০-৩৫০ কোটি টাকা ঢুকছে রাজ্যের কোষাগারে। সঙ্গে রয়েছে পেট্রল-ডিজেলের সেস। সব মিলিয়ে গত দু’মাসে রাজ্যের আয় হয়েছে মোট সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। গত বছরের হিসেব বলছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে রাজ্যের মাসিক রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেদিক থেকে দেখলে মে-জুন মাসে ঘরে আসা টাকার অঙ্কটা খুব বড় না হলেও, সরকার আশাবাদী।
কিন্তু খরচ এখনও আয়ের থেকে বেশি। সরকারি কর্মীদের বেতন এবং পেনশন বাবদ মাসে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। তথ্য বলছে, ৩০ জুন পর্যন্ত কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করে ফেলেছে রাজ্য সরকার। উম-পুনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১ হাজার কোটি অগ্রিম সাহায্য এসেছে কেন্দ্রের কাছ থেকে। এবং সম্প্রতি জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ বাংলাকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৪১৭ কোটি টাকা। ফলে কোষাগারে ঘাটতি বাড়ছে। নবান্ন সূত্রে খবর, এখনও কেন্দ্রের কাছ থেকে জিএসটি ডিভল্যুশন ১১ হাজার কোটি টাকা সহ মোট ৫২ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার থেকে ঋণ নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় খোলা নেই সরকারের সামনে। তবে রাজস্ব আদায়ে গতি আসায় আশায় বুক বাঁধছে নবান্ন।