মহিলাদের আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হল ইরান সরকার

‘গস্ত-এ-এরশাদ’-এর আক্ষরিক অর্থ হল ‘পথপ্রদর্শক বাহিনী’।

December 5, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

ছবি সৌজন্যেঃ লসএঞ্জেলেস

গণ আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হল ইরান সরকার। মেয়েদের নিয়ে ইরানের প্রশাসনের গোঁড়া মানসিকতার বিরুদ্ধে বড় জয় পেলেন ইরানের মহিলারা।

১৯৮৩ সালে ইরানে এই হিজাব সংক্রান্ত আইন চালু করা হয়। তখন থেকেই প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নারীর মাথা ঢেকে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। সম্প্রতি মাহসা আমিনি নামে এক তরুণী সেই আইন অমান্য করায় গ্রেপ্তার হন। হিজাব না পরায় তাঁকে পুলিশ ধরে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায়। অভিযোগ, এরপরই শুরু হয় অত্যাচার। পুলিশি নির্যাতনের জেরে মৃত্যু হয় মাহশা আমিনির। যেই ঘটনার পর রাতারাতি অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় গোটা ইরান জুড়ে। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়েছে সেদেশের মৌলবাদী সরকার। এমনকী বিশ্বকাপের মঞ্চেও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন গলা মেলাননি ইরানের জাতীয় দলের ফুটবলাররা। এই প্রতিবাদ ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী রূপ নিয়েছে। তারপরেই রাতারাতি আইন বদলানোর ভাবনাচিন্তা শুরু করল ইরান সরকার।

ইরানের কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ জাফর মন্তেজারি ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ’কে জানিয়েছেন, ওই নীতিপুলিশ কোনও দিনই ইরানের কেন্দ্রীয় বিচারব্যবস্থার অন্তর্গত ছিল না। ইরান সরকার ওই নীতিপুলিশ বাহিনী ‘গস্ত-এ-এরশাদ’কে সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

‘গস্ত-এ-এরশাদ’-এর আক্ষরিক অর্থ হল ‘পথপ্রদর্শক বাহিনী’। এই বাহিনী নিজেদের যাত্রা শুরু করে ২০০৬ সাল থেকে। ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই নীতিপুলিশ বাহিনীর। প্রকাশ্যেই জানানো হয়েছিল, এই বাহিনীর লক্ষ্য হবে ইরানে হিজাব সংস্কৃতি যথাযথ ভাবে পালিত হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা। মেয়েদের ‘শালীনতা’র পাঠ দেওয়া।

সেই নীতিপুলিশিরই শিকার হন ইরানের তরুণী আমিনি। ইরানের ‘পোশাকবিধি’ না মানায় উচিত শিক্ষা দিতেই গস্ত-এ-এরশাদের বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে লক আপে বন্দি করেছিল। পরে হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর মৃত্যু হলে অভিযোগ ওঠে ইরানের নীতিপুলিশ বাহিনীর দিকেই।
এ ঘটনায় বিক্ষোভ ছড়ায় ইরান জুড়ে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ৩০০-এর বেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন ইরান পুলিশের হাতে। বিক্ষোভের জেরে গ্রেপ্তার হয়েছেন কমপক্ষে ১৪ হাজার মানুষ। শুক্রবার সেদেশের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘সংবিধান বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যা নমনীয় হতে পারে। আমরা ভাবনাচিন্তা শুরু করেছি।’

অবশেষে আন্দোলনের ফল পেতে চলেছেন ইরানের মহিলারা। এবার থেমে গেল ‘গস্ত-এ-এরশাদের’ যাত্রা। ইরানের মহিলাদের এই আন্দোলন গোটা পৃথিবীর কাছে মাইল ফলক হয়ে থাকবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen
দিন বাকি