টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত আলিপুরদুয়ার জেলা
আর বৃষ্টি চাইছে না উত্তরবঙ্গ। একটানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আলিপুরদুয়ার জেলার জনজীবন। যার প্রভাব পড়েছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের যাত্রী পরিষেবা এবং চা শিল্পে। মঙ্গলবার দুপুরে জলের তোড়ে আলিপুরদুয়ারের কামাক্ষাগুড়ি ও জোরাই স্টেশনের মাঝখানে ১৯৫ নম্বর রেল সেতুর কাছে মাটি ধসে যায়। কিন্তু বৃষ্টি না কমায় কোনওক্রমে মেরামতির পর বুধবার ভোরে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও অত্যন্ত ধীর গতিতে ওই এলাকা দিয়ে চলছে দূরপাল্লার ট্রেনগুলি। ফলে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের বেশির ভাগ স্টেশনে ব্যাহত হয়েছে স্বাভাবিক রেল চলাচল। দিনভর দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে রাজধানী এক্সপ্রেস সহ ১৩টি আপ ও ডাউন দূরপাল্লার ট্রেনকে।
আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে ডিভিশনের নাগরাকাটার কাছেও রেল লাইনে ধস নেমে বিঘ্নিত হয়েছে রেল পরিষেবা। এই পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে অন্য দিকে লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান হচ্ছে রেলের। কারণ, দুর্যোগ এড়াতে টিকিট বাতিল করার হিড়িক পড়েছে যাত্রীদের মধ্যে। রেলের জনসংযোগ অফিসার প্রণবজ্যোতি শর্মা জানিয়েছেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও আমরা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অতিরিক্ত বৃষ্টি।’ এদিকে, সিকিমের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের পক্ষ থেকেও আগামী চব্বিশ ঘন্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে ডুয়ার্স এলাকায়। আবহাওয়া দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে গত ২৪ ঘণ্টায় বারোভিশায় ৩৯৭, মূর্তিতে ২৫৮, গজলডোবায় ২৪২, আলিপুরদুয়ারে ১৮৮ এবং শিলিগুড়ির চম্পাসারিতে ২১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
শুধু রেল নয়, বৃষ্টির ফলে মাথায় হাত পড়েছে ডুয়ার্সের চা শিল্পপতিদেরও। এমনিতেই বর্ষার সময় কাঁচা চা পাতার উৎপাদনে ফি বছর ঘাটতি দেখা দেয়। কিন্তু চলতি বর্ষার মরসুমে টানা বৃষ্টিতে চায়ের উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলায় কমপক্ষে সত্তরটি চা বাগান ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘একে উৎপাদন খরচ এক লাফে অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় ধুঁকতে শুরু করেছে চা শিল্প। তার উপর এই মারাত্মক দুর্যোগে আমরা কার্যত দিশেহারা।’ চা শিল্পের মতো ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কায় প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন খারিফ ফসলের কৃষকরাও। আনাজের বাজারে শাকসব্জির দাম বেড়ে গিয়েছে। আলিপুরদুয়ারের জেলা শাসক সুরেন্দ্র কুমার মীনা বলেন, ‘চা বাগানের ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে জরিপের কাজ শুরু হয়েছে।’
অন্যদিকে, হলদিবাড়ি থেকে বিন্নাগুড়ি রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে হাঁটুর উপরে জলের স্রোত বইতে থাকায় রাত থেকে ছোট গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নাগরাকাটা থানার ভিতর ঢুকে পড়ে নদীর জল। মহিলা লকআপ থেকে আধিকারিকদের অফিস রুমে জলের স্রোতের হাত থেকে বাঁচতে পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীরা কেউ বেঞ্চের উপরে তো কেউ আবার টেবিলের উপরে আশ্রয় নেন। ভুটান পাহাড়ে অবিরাম বৃষ্টিতে হাতি নালার জলে ভেসে আসে ১২ ফুট লম্বা পাইথন।