বড়দিনে কীভাবে শুরু হয়েছিল উপহারের আদান-প্রদান?

প্রচলিত বিশ্বাস মতে, যীশু মাতা মেরির কোলে আসার পরে তিন জন জ্ঞানী ব্যক্তি যীশুকে তিনটি উপহার দেন। উপহার দেওয়ার ঘটনাকে মনে রেখেই বড়দিনে উপহার দেওয়া নেওয়ার সূত্রপাত।

December 25, 2024 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi
বড়দিন মানেই উপহারের আদান-প্রদান

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আগামীকাল বড়দিন, খ্রিস্ট ধর্মের অন্যতম বড় উৎসব। এই উৎসব উদযাপনের মাধ্যম হল উপহারের আদান-প্রদান। উপহার পাওয়া ও উপহার দেওয়া; দুই-ই সমান আনন্দের। ক্রিসমাস ইভজুড়ে চলে উপহার দেওয়া-নেওয়া। বড়দিনে উপহার দেওয়া-নেওয়ার রীতির নেপথ্যে রয়েছে এক জনশ্রুতি। প্রচলিত বিশ্বাস মতে, যীশুর জন্মের পর তিনজন জ্ঞানী ব্যক্তি তাঁকে তিনটি উপহার দিয়েছিলেন। এই ঘটনাকে মনে রেখে, বড়দিনে উপহার দেওয়া-নেওয়ার প্রচলন।

কথিত আছে, যীশুর জন্মের পর তিন জন জ্ঞানী ব্যক্তি তাঁকে দেখতে এসে তিনটি উপহার দেন। সেগুলি ছিল স্বর্ণ, ধূপ এবং গন্ধতৈল। আসলে তিনটি উপহার ছিল রাজত্ব, দৈবত্ব আর মৃত্যুকে নির্দেশ করে। বড়দিনের আগের রাতে স্যান্টাকে নিয়ে শিশুদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ দেখা যায়। খুদেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এই উত্‍সবে তাদের প্রাপ্য উপহার নিয়ে। ক্রিসমাস স্টকিং বা বড়দিনের মোজা ঝুলিয়ে রাখার প্রচলন আজও রয়েছে। ক্রিসমাস স্টকিং হল একটি খালি মোজা বা মোজা জাতীয় ব্যাগ যা সেন্ট নিকোলাস দিবস বা ক্রিসমাসের প্রাক্কালে ঝুলানো হয়, যার মধ্যে সেন্ট নিকোলাস বা সান্তা ক্লজ এবং ফাদার ক্রিসমাস ছোট ছোট খেলনা, ক্যান্ডি, ফল, কয়েন দিয়ে যান। এই এই জিনিস গুলিই সাধারনত স্টকিং স্টফার বা স্টকিং ফিলার হিসাবে পরিচিত। মোজার নেপথ্যে রয়েছে মজাদার গল্প।

কথিত আছে, স্যান্টা অর্থাৎ সেন্ট নিকোলাস দুস্থদের সাহায্যের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া তার সমস্ত ধন-সম্পত্তি তিনি গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। দেশ দেশান্তরে ঘুরে দুঃস্থ বা বিপদগ্রস্ত কাউকে দেখলেই সর্বতোভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করতেন। গোপনে মাঝে মাঝেই তাঁদের উপহার দেওয়ারও চেষ্টা করতেন তিনি। একদিন তিন কন্যা সন্তানের কন্যাদায়গ্রস্ত বৃদ্ধ, দুস্থ এক পিতাকে তিনি গোপনে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি জানতেন দুস্থ হলেও ওই ব্যক্তি কারও দান গ্রহণ করেন না। অত্যন্ত গোপনে তাকে সাহায্য করেন। একদিন দুস্থ ওই ব্যক্তি নিজের মোজা শুকনোর জন্য চিমনিতে তা লাগিয়ে রেখেছিলেন। রাতের অন্ধকারে মোজা নিকোলাসের দেওয়া সোনাদানায় ভরে যায়। পরপর তিন বার এই ঘটনা ঘটে। শেষ বার এই বৃদ্ধ নিকোলাসকে দেখতে পেয়ে যান। নিকোলাস এই বিষয়টি তাঁকে গোপন রাখতে অনুরোধ করেন। কিন্তু বিষয়টি গোপন থাকেনি। সেই দিন থেকেই গোপনে যখন কেউ কাউকে উপহার দেয়, মনে করা হয় নিকোলাস দিয়েছেন। উপহার পাওয়ার আশায় বাচ্চারা মোজা ঝুলিয়ে রাখে। ধীরে ধীরে নিকোলাসের গল্প জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ডে নিকোলাসের এই গল্পকে ভিত্তি করেই ক্রিসমাসের আগে ক্রিসমাস ইভ পালন করা ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়। মধ্যরাতে শিশুদের উপহার দেওয়ার প্রচলন হয়। যা ফাদার ক্রিসমাস এবং ওল্ড ম্যান ক্রিসমাস নামেও উপহার দেওয়া হয়।

তবে এই ঘটনার সূত্র পাত এক গল্প থেকে, গল্পটির নাম দ্যি গিফটস অব দ্যি ম্যাজাই। ১৯০৫ সালের ১০ ডিসেম্বর দ্য নিউ ইয়র্ক সানডে ওয়ার্ল্ডে গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯০৬ সালের এপ্রিল মাসে ও হেনরির গল্পসংকলন দ্য ফোর মিলিয়নে ছোট গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল। নিউ ইয়র্ক শহরের পিটি’স টেভার্ন বা আর্ভিং প্লেসে গল্পটি লেখা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

বড়দিন উপলক্ষ্যে এক তরুণ দম্পতির একে অপরের জন্যে উপহার কেনার মর্মস্পর্শী কাহিনী রয়েছে গল্পে। বড়দিনের প্রাককালে ডেলা দেখে স্বামী জিমের জন্যে উপহার কেনার জন্য তার কাছে সামান্য কিছু টাকা রয়েছে। ডেলা মাদাম সফ্রোনির সাথে দেখা করে। মাদাম সফ্রোনি ডেলার চুল কিনে নেন। চুল বিক্রির টাকায় সে জিমের জন্যে পকেট ঘড়ির একটি প্লাটিনামের চেন কেনে। সন্ধ্যায় জিম কাজ থেকে ফিরলে ডেলা জানায়, সে তার জন্য প্লাটিনামের চেন কিনতে চুল বিক্রি করে দিয়েছে। অন্যদিকে, জিম ডেলার জন্য চিরুনি কেনে। কিন্তু চুল বড় না হওয়া পর্যন্ত ডেলা সেটি ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু চিরুনি কিনতে গিয়ে জি ঘড়িটি বিক্রি করে দিয়েছে। জিম ও ডেলা একে অপরকে উপহার দিল ঠিকই, কিন্তু কেউই একে অপরকে দেওয়া উপহার ব্যবহার করতে পারে না। কিন্তু উপহার দুটি ভালবাসার অনন্য নজির হয়ে থাকে। সেই ম্যাজাই থেকে মোজা, আজও চলে আসছে ক্রিসমাসে উপহার দেওয়া-নেওয়ার রেওয়াজ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen