সিনেমা, মগজ ধোলাই এবং ভারতের লোকসভা নির্বাচন
সৌভিক রাজ
‘যায় যদি যাক প্রাণ, হীরকের রাজা ভগবান’- মগজ ধোলাই! মনে পড়ে? দেশবাসীর মগজ ধোলাইয়ের এক চমৎকার ফন্দি আঁটা হয়েছে। না আজ যন্তর মন্তর নেই, কিন্তু সিনেমা হল আছে আর হাজার হাজার গবেষক আছেন। ছবি আমজনতা দেখেন, তাই এটিই সবচেয়ে সহজ মাধ্যম, মাটির কাছে পৌঁছনোর জন্যে। এদেশে খুব সুচারুভাবে ছবিকে হাতিয়ার করা হচ্ছে।
নাটক, সিনেমা এবং সাহিত্য যে প্রোপাগান্ডা ছড়ায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শিল্প ও শিল্পী যে প্রোপাগান্ডা ছড়াবে এটা নতুন কিছুও নয়। কিন্তু বিজেপি শাসিত ভারত অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। এখানে ঘন ঘন ছবি বয়কটের ডাক দেওয়া হয়। নায়িকার বিকিনির রঙ নিয়েও ফরমান জারি হয়। যাক সে অন্য কথা। কিন্তু সবার আড়ালে যে বড়ি খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে মানুষকে, সেটা একটু ভাবা যাক নাকি?
কাল ‘ম্যায় অটল হু’-এর খবর প্রকাশ্যে এসেছে। বিনোদন ভানুশালী, সন্দীপ সিং, স্যাম খান, কমলেশ ভানুশালীর প্রযোজনায় ছবিটি পরিচালনা করেছেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক রবি যাদব। পঙ্কজ ত্রিপাঠির ফার্স্টলুক দেখেই নেট পাড়া নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। শুনেছি, ছবিটি মুক্তি পাবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। ঠিক তার চার মাসের মাথায় দেশের সরকার নির্বাচন করতে ভোট দেবেন আমজনতা।
একটু পিছিয়ে যাই, ২০১৯ জানুয়ারি। দ্যি অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার নামের ছবি বেরোলো, মনমোহন সিংহের অসহায়তা দেখানো হল। পিছন থেকে আহমেদ প্যাটেল, রাহুল, সোনিয়াদের সরকার চালানো দেখানো হল, দেশে একটা ধারণা তৈরি করা হল, কংগ্রেসকে ভিলেন বানানো হল। মানুষের মনে তা গাঁথা হয়ে গেল। তিন মাস পর ফসল উঠল ভোটে, বিজেপির ফের ক্ষমতায়। সেবার ভোট চলাকালীন তাসখণ্ড ফাইল বের করা হল এপ্রিলে, আরও ফসলের পরিমাণ বাড়ল। নমো অর্থাৎ মোদীর বায়োপিক মুক্তি নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল, কিন্তু নির্বাচন কমিশন নিজের মান বাঁচাতে ভোট পর্বে তা মুক্তির অনুমতি দেয়নি। কিন্তু যে হারে প্রচার চলেছিল, তা বিজেপির নির্বাচনী জনসভার তুলনায় কোনও অংশে কম নয়।
আর এবার আসছে, ম্যায় অটল হু। যেখানে দর্শকদের চোখে মহামতি অটলের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেই সঙ্গে ধাপে ধাপে দ্যি কাশ্মীর ফাইলস, রাম সেতু এসেছে। মগজ ধোলাই হয়েছে একটু একটু করে। বিজেপি বান্ধব দর্শক তৈরি হয়েছে।