কেন্দ্রের ‘বিকাশের’ ঠেলায় আশঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে গ্রেট নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে
উত্তরাখণ্ডের যোশীমঠ নিয়ে গোটা দেশ উদ্বেগে রয়েছে। লাদাখের পরিবেশ বিপন্ন, আসন্ন বিপদের কথা জানিয়ে সতর্ক করেছেন সোনম ওয়াংচুক। এরই মধ্যে চিন্তা বাড়াচ্ছে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত কিছু প্রকল্প।বিশেষজ্ঞরা বলছেন যোশীমঠের ডুবতে শুরু হওয়ার অন্যতম বড় কারণ এই শহরের ভৌগলিক অবস্থান এবং গঠন।
হিমালয়ের ভূমিধসের উপরেই ধীরে ধীরে তৈরি হয়ে উঠছিল উত্তরাখণ্ডের এই জনপদ। যোশীমঠের মাটির ভারবহন ক্ষমতা সেই কারণেই কম। প্রকৃতির ক্ষমতার তোয়াক্কা না করেই ছোট্ট জনপদ যোশীমঠ হয়ে উঠেছে শহর। পাহাড়ের গায়ে বাড়ি, হোটেল তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছরে বেপরোয়া নির্মাণ, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, এবং জাতীয় সড়ক প্রসস্ত করার কাজে আরও চাপ বেড়েছে প্রকৃতির উপর। উন্নয়নের নেশায় মত্ত মানুষ খেয়ালই করেনি কখন প্রকৃতির সহ্যের বাঁধ ভেঙেছে!
সোনম ওয়াংচুকের মতে লাদাখ সংক্রান্ত একাধিক সিদ্ধান্তের কারণে ক্রমেই ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এই এলাকা। নীতি নির্ধারণে যদি এইভাবে গাফিলতি হতে থাকে, তাহলে লাদাখের দুই-তৃতীয়াংশ হিমবাহ গলে যাবে। মানুষের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার ফলে দ্রুত গতিতে গলছে হিমবাহ, এমনটাই জানা গিয়েছে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায়।
এবার নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। জানা গিয়েছে, ভারত সরকার প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও সরবরাহ এবং শিল্পের ক্ষেত্রের জন্য দেশের দক্ষিণতম প্রান্তে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে ‘উন্নত’ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। একে বলা হচ্ছে- ‘মেগা ইফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্ট’। এটিকে ‘গ্রেট নিকোবর প্ল্যান’ও বলা হচ্ছে।
উদ্বেগের কারণ–
সম্প্রতি, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের একটি দল এই মেগা প্রকল্পের বিষয়ে উদ্বেগ এবং আশঙ্কা ব্যক্ত করে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছে।
তাদের মতে, প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শমপেন উপজাতিকে বাস্তুচ্যুত হতে হবে। এই উপজাতিরা এই মুহূর্তে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই অঞ্চলের গ্যালাথিয়া উপসাগরিয় এলাকা ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক কচ্ছপের আবাসস্থলগুলির মধ্যে একটি। শুধু তাই নয় পরিবেশের ভারসাম্য ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে ৪০০ ধরনের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।
প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পর্কে:
প্রস্তাবিত প্রকল্পে চারটি ধাপ রয়েছে। চারটি প্রকল্পের আকারই বেশ বড়।
১. ‘ট্রান্সশিপমেন্ট টার্মিনাল’। ১৪.২ মিলিয়ন TEU (২০ ফুটের কন্টেনার) কার্গো ওঠা নামা করবে।
২. ১৬,০০০ হেক্টর জমিতে সোলার প্ল্যান্ট তৈরি করা হবে।
৩. উপকূলীয় অঞ্চলে দুটি নতুন শহর গড়ে তোলা হবে।
৪. প্রতি ঘণ্টায় ৪,০০০ জন যাত্রী ওঠা-নামা করতে পারে এরকম ক্ষমতাসম্পন্ন একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি হবে।
প্রকল্প সম্পর্কে
প্রকল্পের খরচ: পুরো প্রকল্পটির জন্য আনুমানিক ৭৫,০০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, পরিবেশ মন্ত্রক পরিবেশবীদদের আশঙ্কাকে উপেক্ষাকা করেই এই ‘মেগা প্রকল্প’কে ছাড়পত্রদিয়ে দিয়েছে। ফলে দেশের দক্ষিণতম প্রান্তে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে আশঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে।