দেশ বিভাগে ফিরে যান

পালঘর পিটিয়ে মারার মামলা, চার্জশিট পেশ সিআইডির

July 17, 2020 | 3 min read

পালঘরে দুই সাধু ও তাঁদের গাড়ির চালককে পিটিয়ে মারার মামলায় (Palghar Lynching Case) অভিযুক্ত ১২৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে দু’টি চার্জশিট পেশ করল মহারাষ্ট্র পুলিশের সিআইডি। তিন মাস আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ঘটনার ভাইরাল ভিডিয়ো দেখে শিউরে উঠেছিলেন নেটিজেনরা।

সূত্রের খবর, ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (CID) আদালতে যে দু’টি চার্জশিট জমা দিয়েছেন, তার একটি ৪,৯৫৫ পাতার। অপরটি ৫,৯২১ পাতার। বুধবার মুম্বই লাগোয়া পালঘর জেলার দহানু তালুকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম শ্রেণি (JMFC)-র আদালতে এই চার্জশিট দু’টি জমা দেওয়া হয়েছে।

সিআইডি জানিয়েছে, এই পালঘর গণপিটুনির মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অকাঠ্য প্রমাণ জোগাড় করতে ১১৮ সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজন হিসেবে ৮০৮ জনকে জেরা করে, বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ১৫৪ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া, আরও ১১ নাবালককেও এই মামলায় আটক করা হয়েছে। অভিযুক্তদের একজনকেও এখনও পর্যন্ত জামিনে ছাড়া হয়নি।

তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, মহারাষ্ট্র সিআইডির ডেপুটি সুপার বিজয় পাওয়ার এই মামলার তদন্তকারী অফিসার। বুধবার তিনি নিজে দহানুর JMFC আদালতে ১২৬ জনের বিরুদ্ধে দু’টি পৃথক চার্জশিট পেশ করেছেন।

করোনা লকডাউনের মধ্যে এই ঘটনা ঘটায় আইপিসি ছাড়াও একাধিক আইনের সংশ্লিষ্ট নানা ধারায় ওই ১২৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে মহামারী আইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, মহারাষ্ট্র পুলিশ আইন ও মহারাষ্ট্র জনসম্পত্তি সুরক্ষা আইনও প্রয়োগ করা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ধারার মধ্যে রয়েছে খুন, অস্ত্র হাতে দাঙ্গা, দুষ্কৃতীদের কাজে লাগিয়ে সরকারিকর্মীদের কাজে বাধা দান।

সিআইডি জানিয়েছে, এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে দুই কিশোরের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ হাতে রয়েছে। তারা নাবালক হওয়ায় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে তাদের পেশ করতে হবে। সেই মতো প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

সিআইডির এক কর্তা জানিয়েছেন, আদালত দস্তাবেজগুলি যাচাই-বাছাই করছে। তা শেষ হলে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করবে আদালত।

১৬ এপ্রিল রাতে মুম্বই থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে মহারাষ্ট্রের পালঘরে দাদরা ও নগর হাভেলি সীমানার গাঢ়চিনচালে গ্রামে চোর ঢোকার গুজব ছড়ায়। এমনকী, চোরেরা শিশুদের (child-lifters) কিডনি কেটে নিয়ে পাচার করে দিতে পারে বলেও রটে যায় পুরো গ্রামে। আরও রটে যায় যে, চোরেরা গ্রামের মধ্যেই রয়েছে। এই অবস্থায় গ্রামবাসীরা সামনে পেয়ে যান দুই সাধু (monks) এবং তাঁদের গাড়ির চালককে। তাঁদেরই চোর ভেবে নৃশংস ভাবে মারধর শুরু করেন গ্রামবাসীরা। পুলিশ ওই তিন জনকে উদ্ধার করতে গেলে, তাঁদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশের সামনেই বাঁশ-লাঠি দিয়ে পেটানো হয় ওই তিন জনকে। ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। মৃতদের পরিচয় চিকনে মহারাজ (৭০), সুশীলগিরি মহারাজ (৩৫) ও চালক নিলেশ তেলগাড়ে (৩০)। জানা যায়, লকডাউনের কারণে তাঁরা গাড়ি করে সুরাটে যাচ্ছিলেন। পরিচিত জনের শেষকৃত্যে যোগ দিতে।

ওই ঘটনার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে। সেই সব ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনার জেরে চাপে পড়ে যায় উদ্ধব ঠাকরের সরকার। এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রং চড়ানোরও চেষ্টা হয়। সকলের প্রতি আর্জি জানিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বলেন, ‘গ্রামে গুজব ছড়িয়েছিল চোর ঢুকেছে। গ্রামবাসীরা ভেবেছিলেন, চোর গ্রামেই রয়েছে। তাই ওই তিন জনকেই চোর ভেবেছিলেন তাঁরা। এর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা খুঁজতে যাবেন না। ঘটনায় সাম্প্রদায়িকতার কোনও দৃষ্টিকোণ নেই।’

মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখকে ঘোষণা করতে হয়, পালঘরে দুই সাধু ও তাঁদের গাড়ির চালককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় কোনও সাম্প্রদায়িক বিষয় নেই। ওই ঘটনায় ধৃতদের মধ্যে একজনও মুসলিম নেই।

পুলিশের হাত থেকে পরে মামলাটি চলে যায় সিআইডির কাছে। বিশিষ্ট আইনজীবী সতীশ মানেশিন্ডেকে এই মামলায় বিশেষ সরকারি কৌসুঁলি পদে নিয়োগ করা হয়।

এই ঘটনার জেরে সাসপেন্ড করা হয় সংশ্লিষ্ট কষা থানার অফিসার আনন্দরাও কালেকে। শাস্তির মুখে পড়েন একাধিক পুলিশকর্মী ও সাব-ইনস্পেক্টর। নানা পদমর্যাদার ৩৫ জন পুলিশকর্মী-অফিসারকে বদলি করে দেওয়া হয়। জোর করে ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পালঘর জেলা পুলিশের প্রধান গৌরব সিংকে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় দত্তাত্রেয় শিন্ডেকে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#CID, #Palghar Lynching Case, #JMFC, #monks

আরো দেখুন