বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

আপনি কি জানেন কারা পালন করে গোচিপুনা?

July 17, 2020 | 2 min read

রাজবংশী সমাজ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষিপ্রধান এই সমাজের প্রধান ফসল ধান,পাট এবং গবাদি পশুপালন। ধানকে কেন্দ্র করেই রাজবংশী সমাজে হালযাত্রা, গোচিপুনা, ধানের আগ নেওয়া, বুড়াবুড়ি খেলা, পৌষ পার্বণ, নবান্ন, প্রভৃতি লোকাচার পালিত হয়। রাজবংশী কৃষিজীবী সমাজের জীবনচর্যার স্বতঃস্ফুর্ত প্রকাশ ঘটে এইসব লোকাচারে।

বর্তমানে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে কৃষিকাজে বিপ্লব ঘটেছে। উদ্ভব হয়েছে ট্রাকটার, ফসল কাটা ও মাড়াই করার জন্য মেশিন প্রভৃতির। তেমনি হারিয়ে গেছে জৈবিক পদ্ধতিতে চাষ এবং এইসমস্ত লোকাচার। চারিদিকে ভরে গেছে রাসায়নিক এবং কীটনাশক দ্বারা উৎপাদিত ফসল।

কিন্তু, তাও কিছু রাজবংশী আজও পালন করেন গোচিপুনা। রাজবংশী ভাষার ‘গোচিপুনা’ শব্দটির বাংলা অর্থ ধানের চারা রোপণ করা। শ্রাবণ মাসে ভূমি পূজার মাধ্যমে আমন ধানের প্রথম চারা রোপণ করাকেই কামতাপুরী বা রাজবংশী ভাষায় গোচিপুনা বলে। 

বর্ষাকালে রাজবংশী কৃষক হালচাষ দিয়ে ‘হেউতি’ (আমন) ধানের জমি তৈরী করে জমির এক কোণে কাদামাটি দিয়ে একটি ছোট বেদী তৈরী করে। একটি কলাগাছের চারা, একটি পাটগাছ, একটি কালোকচুর গাছ খাড়া করে পুঁতে দিয়ে বেদীটিকে জলকাদা দিয়ে ভালোভাবে লেপে দেয়।

গোচিপুনা করার আগে রাজবংশী কৃষক একটি কাঁকড়া সংগ্রহ করে। পূজোর উপকরণ হিসেবে বাড়ি থেকে সিঁদুর, কাঁচা দুধ, কলা, আম,কাঁঠাল, সোনা-রুপো ধোয়া জল ও সংগৃহীত কাঁকড়াটি নিয়ে কৃষক জমিতে যায়। কাদামাটির বেদীর সামনে কৃষক হাটুগেড়ে বসে প্রথমে কাঁকড়াটিকে কাদার বেদীতে চেপে ধরে ভালোভাবে বসিয়ে দেয়। 

এরপর কলাগাছ, পাটগাছ, কালোকচুর গাছের গোড়ায় ও কাঁকড়াটির পিঠে সিঁদুর লাগিয়ে দেয়। কলার পাতায় বা ঢোনায় (ঢোঙ্গায়) পূজোর উপকরণে ফুল, তুলসির পাতা দিয়ে জল ঘুরিয়ে নিবেদন করে। কৃষক এবার ডান হাতে একগোছা ধানের চারা নিয়ে বাম হাত দিয়ে কাদার বেদীতে রোপণ করে। 

রোপণ করা হয়ে গেলে কলাগাছ, পাটগাছ, কালোকচুর গাছ, রোপা ধানের চারার গোড়ায় ও কাকড়ার পিঠে সোনা-রুপোর জল ঢেলে দিয়ে বেদীতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে ও বাচ্চাদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করে।

রাজবংশী সমাজের পূজা-পার্বণ ও শুভকাজে সিঁদুর, সোনা-রুপোর জল, কাচা দুধ মাঙ্গলিক উপাচার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কলাগাছ এখানে বংশবিস্তারের প্রতীক, পাট অর্থকরী ফসলের প্রতীক, কালোকচু ঈশান কোণে ঘণ কালো মেঘের প্রতীক এবং কাকড়া ভূমিকর্ষণ ও উর্বরাশক্তির প্রতীক।

লেখক: দুলাল রায় (বাংলাদেশ) এবং মজিদ আলম (ভারত)

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Gochipuna, #Celebration

আরো দেখুন