নিমপাতা খেলে কী কী রোগ সারে
একসময় কচি নিমপাতা বসন্তকালে খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। ওই সময়ে নিমগাছের সমস্ত পাতা ঝরে গিয়ে নতুন পাতায় গাছ ভরে ওঠে। অবশ্য নিমের পাতা সারা বছর ধরেই গজায়, তার পরিমাণ অতি সামান্য। মাঝে মাঝে গাছের ডাল ভেঙে রাখলে সারাবছরই কমবেশি কচি নিমপাতা খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু বসন্তকালে কচি নিমপাতা খাওয়ার একটা আলাদা আঙ্গিক রয়েছে।
বসন্তকাল অর্থাৎ ফাল্গুন-চৈত্র মাস এর আগে ও পরে ১৫ দিন করে ধরলে মাঘের মাঝামাঝি থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি সময় কচি নিমপাতা পাওয়া যায় এবং তা ভেজে সামান্য পরিমাণে দুপুরে ভাতের সঙ্গে মেখে খেতে পারি। শীতকালে আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং এই সময়টাতে শাক-সব্জি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। আমরা অন্যান্য ঋতুর চেয়ে অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে খেয়ে থাকি।
ঋতু সন্ধিকাল হিসেবে মাঘের মাঝামাঝি থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমাদের শরীরের বল কমে যায়, সহজে হজম হতে চায় না খাদ্যদ্রব্যগুলিতে, অরুচি আসে, শরীরে একটা দাহ সৃষ্টি হয়, সেজন্য আসে দুর্বলতা, অবসাদ, অল্প পরিশ্রমে ক্লানতি। এছাড়া কোনও রোগভোগের পর এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার পর যে দুর্বলতা আসে, তা বৃদ্ধি পায়। শরীর মনকে তরতাজা রাখতে কচি নিমপাতার জুড়ি মেলা ভার।
এক্ষেত্রে কচি নিমপাতা ভালোভাবে ধুয়ে রোদে সামান্য শুকিয়ে নিয়ে হালকা আঁচে ভাজতে হবে সামান্য সরষে তেল দিয়ে। একদিন অনেকটা পাতা ভেজে রাখা যায়। এটি ভাতে মেখে খাওয়ার চল বাংলার প্রায় সর্বত্র। এই তিনটে মাস মাঝেমধ্যে অর্থাৎ সপ্তাহে ৩-৪ দিন খেতে পারলে শরীরে অগ্নিবল বৃদ্ধি হবে, অবসাদ, ক্লান্তি ও দুর্বলতা থাকবে না, খাদ্যে অরুচি আসবে না।
এছাড়া, যকৃতের ক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবে, অ্যালার্জি, খোস-পাঁচড়া-চুলকানি, রক্তদুষ্টিজনিত রোগ দমিত হবে। কচি নিমপাতা শরীর ও মনকে তখন পুনরুজ্জীবিত করে তুলবে। এক কথায় এটি স্বাস্থ্যপ্রদ এবং অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণ সম্পন্ন।
নানাবিধ যৌগ এর থেকে পাওয়া যায়। যার ফলে এটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, রক্তকণিকার বৃদ্ধি ঘটায়। তাছাড়া মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ, ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসের সংক্রমণ, ক্যান্সার, হার্টের অসুখ, যক্ষ্মা, পেপটিক ও ডিওডিনাল আলসার, আমবাত ও সন্ধিগত বাত, জন্ডিস, অম্ল-অজীর্ণ, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি আরও বহুক্ষেত্রে এটি কাজ করে।