কেন চৈত্র সংক্রান্তিতে উদযাপিত হয় চড়ক পুজো?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এই উৎসব শুরু হয় পয়লা বৈশাখ দিয়ে, আর শেষ হয় চৈত্র সংক্রান্তিতে। প্রতিটি উৎসবই কোনও না কোনও মাঙ্গলিক বার্তা বহন করে। বাঙালির এই সমস্ত উৎসবের মধ্যে চৈত্র সংক্রান্তির চড়কের পুজো বেশ বিখ্যাত। প্রায় একমাস ধরে চলে এই উৎসব। প্রতিবছর চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তিতে এই উৎসব পালিত হয়।
প্রচলিত রয়েছে, রাজা সুন্দরানন্দ ঠাকুর ১৪৮৫ সালে এই পুজোর প্রচলন করেন। তবে তিনি এই পুজো আরম্ভ করলেও তা কখনও রাজবাড়ির পুজো ছিল না, বরং এটি ছিল হিন্দু সমাজের লোকসংস্কৃতি। শোনা যায়, চড়ক পুজোর সন্ন্যাসীরা প্রত্যেকেই ছিলেন হিন্দু ধর্মের তথাকথিত নীচু সম্প্রদায়ের লোক। তাই এই পূজায় এখনও কোনও ব্রাহ্মণের প্রয়োজন পড়ে না। এই সব পুজোর নেপথ্যে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস।
চৈত্র সংক্রান্তির ৯ দিন বা ৭ দিন আগে থেকে শুরু হয় চড়কের প্রস্তুতি, চরক হচ্ছে এক বিশাল গাছের কান্ড যেটি সারা বছর জলে রেখে দেওয়া হয়। চড়কের আগের দিন ঢাকঢোল বাজিয়ে জল থেকে তোলা হয়, চড়ক গাছকে ভাল করে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। তারপর জলভরা একটি পাত্রে শিবলিঙ্গ রাখা হয়, যা ‘বুড়োশিব’ নামে পরিচিত। চড়ক উৎসব টি মূলত শিব পার্বতীর মিলন উৎসব। বেলকাষ্ঠ শিব কে চৈত্র সংক্রান্তি অর্থাৎ চড়কের ১১ দিন ৯দিন ৭ দিন ও ৩ দিন আগের এই দিনগুলিতে গঙ্গা স্নান করানো হয় ও তেল সিঁদুর দেওয়া হয়। তারপর লালসালু দিয়ে মহাদেব কে ঢেকে দেওয়া হয়। মহাদেবের গায়ে পড়ানো হয় আকন্দ জবা নীলকন্ঠ ধুতরা বেল পাতার তৈরি মালা।
চৈত্র মাসের শেষ দিনে শিবভক্ত সন্ন্যাসীরা পিঠে বড়শি গেথে চড়ক পরিক্রমা করে অর্থৎ চড়কগাছে সন্ন্যাসীদের চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। মহাশূন্যে ভেসে ও শিবভক্ত সন্ন্যাসীদের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য শিশুদের মহাশূন্যে সন্ন্যাসীদের হাতে তুলে দেয় অভিভাবকেরা এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে এক হাতে বাচ্চাটিকে ধরে রেখে অন্য আরেক হাত দিয়ে পরম শিব ভক্ত দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে বাতাসা ফল ও নানান কিছু ছড়ান সন্ন্যাসীরা। আবার কোথাও সন্ন্যাসীদের পিঠে, হাতে, পায়ে, শরীরের অন্যান্য অঙ্গে জ্বলন্ত বাণ শলাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার রীতিও কোথাও কোথাও দেখা যায়। এছাড়াও, কুমিরের পুজো, জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, গায়ে ধারালো জিনিস ফোটানো, ধারালো কিছুর ওপর লাফানো, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, ইত্যাদি এই পুজোর বিশেষ অংশ বলে মনে করা হয়।
নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই এই পুজো উপলক্ষে সন্ন্যাস গ্রহণ করে থাকেন। সন্ন্যাসীদের গেরুয়া বস্ত্র ধারণ করে হবিষ্যি গ্রহণের মত কিছু নিয়ম কারণ পালন করতে হয়। চৈত্রসংক্রান্তির আগের দিন পালিত হয় নীল ষষ্ঠী বাংলার গৃহিণীরা এইদিন ব্রত পালন করেন। নীল বা নীলকন্ঠ মহাদেবের আরেক নাম আর এই চৈত্র মাসের শেষ দিন পালিত হয় চড়ক উৎসব। মূলত পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, নদীয়া, তারকেশ্বর, বাঁকুড়া, হুগলী-এর বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলে এই উৎসব পালিত হয়।