গৃহঋণ এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে মধ্যবিত্তের কাছে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দেশের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত এক বছরে একাধিকবার রেপো রেট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আশঙ্কা করা হচ্ছিল এই রেপো রেট বৃদ্ধির ফলে গৃহঋণ গ্রাহকদের পকেটে চাপ পড়তে পারে। বাড়তে পারে ইএমআই এবং ঋণের ওপর সুদের হার।
এখন দেখা যাচ্ছে রেপো রেট বৃদ্ধির জেরে সত্যিই নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্তের। রেপো বাড়লে ব্যাঙ্কগুলি সুদের হার বাড়ায়। অভিজ্ঞতা বলছে, এক্ষেত্রে আমানত বা জমানো টাকার উপর সুদ যতটা বাড়ে, সেই তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পায় ঋণের উপর সুদ। গৃহঋণ সহ অন্যান্য ব্যক্তিগত ঋণের বাড়তি বোঝা বইতে হয় মধ্যবিত্তকে। মোদি জমানার দ্বিতীয় ইনিংসের শেষ পর্বে এসে সেটাই হাড়ে হাড়ে বুঝছে মানুষ। ২.৫ শতাংশ রেপো রেটের ধাক্কা পড়েছে ঋণের উপর। যাঁরা মাসিক কিস্তি বা ইএমআইয়ের অঙ্ক বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছেন, তাঁদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। তেমনই যাঁরা কিস্তির টাকা স্থির রাখতে চাইছেন, তাঁদের ঋণশোধের সময়সীমা বেড়ে যাচ্ছে অনেকটা।
দেশের অন্যতম একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, গত বছর পর্যন্ত গ্রাহকের সর্বাধিক ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত গৃহঋণের ইএমআই মেটানোর সময়সীমা বেঁধে দিত তারা। হোম লোনের সর্বোচ্চ মেয়াদ ছিল ৩০ বছর। চলতি অর্থবর্ষের জন্য তারা যে ঋণ-নীতি নিয়েছে, তাতে গ্রাহককে সর্বাধিক ৭৭ বছর বয়স পর্যন্ত ঋণ মেটানোর সুযোগ দেওয়া হবে। ঋণের সময়সীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে সর্বাধিক ৩৭ বছর করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের অফিসাররা বলছেন, কোনও গ্রাহকের ক্ষেত্রে ৭৭ বছর বয়স পর্যন্ত ঋণের বোঝা টেনে নিয়ে যাওয়াটা যথেষ্ট কষ্টকর। ঝুঁকিপূর্ণও বটে। আমরা তাই ইএমআই কিছুটা বাড়িয়েই সেই সমস্যা সমাধানে জোর দিচ্ছি। অপর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, তারা বয়সের সময়সীমা ৭০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ বছর করেছে। কিন্তু ঋণের মেয়াদ সর্বাধিক ৩০ বছরই রেখেছে। অর্থাৎ গ্রাহক অনেক ক্ষেত্রেই ইএমআই বৃদ্ধির পথে যেতে বাধ্য হবেন। অপর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, আমরা হিসেব কষে দেখেছি, যদি কেউ ২০ বছরের মেয়াদে ২০ লক্ষ টাকা গৃহঋণ নেন, তাহলে তাঁকে প্রায় চার হাজার টাকা প্রতি মাসে বাড়তি ইএমআই দিতে হবে। অল ইন্ডিয়া ন্যাশনালাইজড ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাসের কথায়, গ্রাহকদের বেশিরভাগই এখন মাসিক কিস্তির অঙ্ক বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এর প্রভাব পড়েছ বাজারেও। সুদের হার বেরে যাওয়ায় গৃহঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমছে। তথ্য বলছে, ডিসেম্বরে শেষ হওয়া তিন মাসে গৃহঋণ নেওয়ার পরিমাণ ৬ শতাংশ কমেছে। সুদের হার বৃদ্ধির ফলে ফ্ল্যাটের দাম বাড়ছে। ফলে ফ্ল্যাট বিক্রিও কিছুটা কমছে। যার ফল ভুগতে হচ্ছে আবাসন নির্মাণ সংস্থাগুলিকে।