সিদ্ধেশ্বরী দেবীর কৃপা আশায় পাঁচশত বছর ধরে চলছে জয়রামপুরের ‘বউ মেলা’
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পাঁচশত বছরের ঐতিহ্যের বউমেলা শুরু হয়েছিল পয়লা বৈশাখের পরদিন, পূজার আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে। অধুনা বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন জয়রামপুরে বটতলে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ৩ দিনব্যাপী এই মেলা।
বৌ-মেয়েরা তরমুজ, কাঁঠাল, কলা আম, শশাসহ মৌসুমী ফল নিয়ে পূজা অর্চনা করেন বটবৃক্ষ তলে ভোগ দিয়ে। ফলের স্তুপ পড়ে যায় বট তলায়। সেই ফল পুজোশেষে ভক্তবৃন্দের মধ্যে প্রসাদরূপে বিলিয়ে দেওয়া হয়।
মেলা প্রাঙ্গনে আদি বটবৃক্ষের নিচে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফল-ফলাদির ঝুড়ি নিয়ে পূজা অর্চনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন নববধূ, জননীরা। থাকে কুমারী মেয়েরাও। এ মেলাকে অনেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা ও বটবৃক্ষকে সিদ্ধেশরী দেবী বলে আখ্যায়িত করেন। প্রায় পাঁচশ বছরের পুরানো একটি বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে এ বউ মেলা। বৈশাখের ২য় দিন থেকে এ বউমেলা শুরু হয়। স্থানীয়রা জানান, এ বটবৃক্ষটি হয়ে উঠেছে পূণ্যের দেবতা এবং সিদ্ধেশ্বরী দেবতা নামে সুপরিচিত। বিশেষ করে স্থানীয় মেয়েরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে সিদ্ধেশ্বরী কালীতলার এ বউ মেলার জন্য। এ বিশ্বাসেই এখানে বউ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দলে দলে মেয়ে-বৌরা ফলের ভোগ নিয়ে হাজির হয় বউ মেলায়।
দেবতার সন্তুষ্টির জন্য পায়রা উড়ানো ও পাঁঠা বলি দেওয়া হয় বৃক্ষ দেবতার পদতলে। স্বামী সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে সারা বছর সুখ শান্তিতে যেন কাটে দাম্পত্য জীবন এই কামনাতেই পূজার আয়োজন করে স্থানীয় মা-জননীরা।
বউমেলায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশ নারী হলেও পুরুষরাও এ মেলায় অংশগ্রহণ করে তবে সংখ্যায় কম। পূজা অর্চনা ছাড়াও বউ মেলায় বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এ বউ মেলায় দারু ও মৃৎ শিল্পীদের তৈরি নানা রঙের নানা বর্ণের টেপা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়না, টিয়া, বাঘ-ভাল্লুক, হাঁড়ি পাতিল থেকে শুরু করে মন্ডা-মিঠাইয়ের দোকান বসে।
বিভিন্ন মনোহারি জিনিস পত্রের পসরা নিয়ে বসে মেলায়। মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠ ও বাঁশের তৈরি লোক পণ্য ছাড়াও মেলায় পাওয়া যায় বাহারী মিষ্টান্ন সামগ্রী। সোনারগাঁওয়ের বউমেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে একটি।
অনেকের বিশ্বাস এখানকার বটমূলের মাটি শরীরের মাখলে রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রেমে সফল ও দ্রুত বিয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার জন্য এ স্থানের মাটি খুবই উপকারী মনে করে এই দিনটিতে সনাতন ধর্মালম্বীর লোকেরা মাটি সংগ্রহ করে থাকে। বউমেলাকে কেন্দ্র করে জয়রামপুর, ভট্টপুর, ষোলপাড়া, পানামসহ আশে পাশের লোকজনদের মধ্যে উৎসব শুরু হয়। এ মেলাটি নারীকেন্দ্রীক হলেও এখানে আসেন সকল ধর্মালম্বীর মানুষ ও বিদেশি পর্যটক।