মণিপুরের পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি, দেখামাত্র গুলির নির্দেশ রাজ্যের বিজেপি সরকারের
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মণিপুরের পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে। বিক্ষোভ চরম আকার নিয়েছে। কার্ফু জারি করে, নেট পরিষেবা বন্ধ করেও রোখা যাচ্ছে না বিক্ষোভকারীদের। এই পরিস্থিতিতে দেখামাত্র গুলির করার নির্দেশ দিল মণিপুর সরকার। সরকারি তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে যে জায়গায় হিংসা চরম আকার নেবে, বিক্ষোভকারীরা আইন ভাঙবে, সেখানে সরাসরি গুলি চালানো হোক। হিংসা থামাতে চরম পদক্ষেপ করল মণিপুরের বিজেপি সরকার।
গত কয়েকদিনে রাজ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ পুলিশ এবং আদিবাসীদের। রাজ্যজুড়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। যা চূড়ান্ত আকার ধারণ করে বুধবার।
বস্তুত, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মণিপুরে অশান্তি চলছে। এর মূলে রয়েছে মেটেই জনজাতির সঙ্গে আদিবাসীদের সংঘাত। মণিপুরের মেটেই জনজাতিকে তফসিলি উপজাতির তকমা দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। মণিপুরের বিজেপি সরকার সেই দাবি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তাতেই ক্ষুব্ধ কুকি-সহ অধিকাংশ আদিবাসী সংগঠন। তাদের বক্তব্য, মেটেইরাও যদি তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি পেয়ে যায়, তাহলে আদিবাসীদের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। তাছাড়া, মণিপুরের বিজেপি সরকার স্থানীয় বনাঞ্চলগুলিতে সমীক্ষা চালাচ্ছে। আদিবাসীদের আশঙ্কা, সরকার এবার বনভুমি ধ্বংস করতে চলেছে। তার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণভাবে গত কয়েক মাসে সেরাজ্যে অন্তত তিনটি গির্জা ভেঙেছে প্রশাসন। সরকারের দাবি, ওই গির্জাগুলি ছিল বেআইনি। সরকারের এই পদক্ষেপে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে আদিবাসী খ্রিস্টানরা। সেটাও বিক্ষোভের অন্যতম কারণ।
পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে মেরি কমের মতো আন্তর্জাতিক মানের অ্যাথলিটদেরও অসহায় হয়ে কেন্দ্র সরকারের কাছে হস্তক্ষেপের আবেদন জানাতে হচ্ছে। মেরি কম এদিন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে টুইটে লিখেছেন, “আমার রাজ্য মণিপুর জ্বলছে। দয়া করে সাহায্য করুন।”
আগুন জ্বলছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে। সেনা নামিয়েও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে মণিপুরের রাজ্যপাল সমস্ত জেলাশাসক, সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটদের চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে দেখামাত্র গুলি চালানোর সরকারি নির্দেশে সিলমোহর দিয়েছেন। বৃহস্পতিবারই সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, হিংসা-বিধ্বস্ত রাজ্যে তারা ৯ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গিয়েছেন। আরও বহু মানুষকে উদ্ধার করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ ‘শুট অ্যাট সাইট’ নির্দেশ জারি করে সরকার।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং রীতিমতো সংকটের মধ্যে পড়েছেন। দিন পনেরো হতে চলল রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেহাল। তার উপর বীরেন সিংয়ের নেতৃত্ব খোদ দলের মধ্যে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তাঁর কাজে অসন্তোষ জানিয়ে জনা ছয় বিধায়ক সরকারি পদ ছেড়ে দিয়েছেন।