সংবাদমাধ্যমকে বঞ্চিত করে সামাজিক মাধ্যমে নিজস্ব প্রচারে অর্থ ব্যয় করছে মোদী সরকার
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ভারতে কয়েক মাস ধরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর যেভাবে ধারাবাহিকভাবে আঘাত আসছে, তাতে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের আমলে দেশের গণতন্ত্রের প্রকৃত দশা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। এ দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর সে অবস্থা নাটকীয়ভাবে মোড় নিয়েছে। যা নিয়ে দেশ-বিদেশে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। এরই মধ্যে চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য প্রকাশ করল একটি সর্বভারতীয় নিউজ পোর্টাল।
২০১৭ সাল থেকে দেশের প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলিতে (প্রিন্ট এবং টেলিভিশন) বিজ্ঞাপন দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলির খরচ বিপুল পরিমানে কাটছাঁট করা হয়েছে। এই সরকারি বিজ্ঞাপন সংবাদমাধ্যমের বড় আয়ের উৎস। ফলে সরকারি বিজ্ঞাপন কম পাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে।
এর পরিবর্তে মোদী সরকার বিপুল পরিমানে অর্থ খরচ করছে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজস্ব প্রচারে! একটি সর্বভারতীয় নিউজ পোর্টাল এই খবরটি প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলিতে (mainstream media) বিজ্ঞাপনের পরিমান কমিয়ে দিয়েছে, তার মানে এই নয় যে সরকার বিজ্ঞাপনে ব্যয় করছে না। শুধু এই অর্থের প্রাপকরা নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
দেখা গিয়েছে ২০১৪-২০১৬ সাল মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলির কাছে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞাপন পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘স্বর্ণযুগ’ ছিল। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে মোদী সরকার ওই সংবাদমাধ্যমগুলির জন্য বিজ্ঞাপন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে শুরু করেছে। ২০১৭-১৮ তে দেখা গিয়েছে, টিআরপি’তে (Television Rating Point) শীর্ষে থাকা নিউজ চ্যানেলগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। প্রিন্ট মিডিয়ার অবস্থা আরও করুণ দশা। সর্বভারতীয় ওই নিউজ পোর্টালটি তাদের প্রতিবেদনে এরকমটাই জানাচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশের মতো কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারের মধ্যেও একই রকমের প্রবনতা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার প্রথম চার বছর, মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলিতে বিজ্ঞাপনের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। কিন্তু এর পরই দ্রুত এই বিষয়টি বদলাতে থাকে। “হিন্দু বিজনেসলাইন যেমন একটি রিপোর্ট জানিয়েছিল, ২০১৮ সালে মোদী সরকারের বিজ্ঞাপন ব্যয় ১৪% হ্রাস পায়। ২০১৯ সালে, এটি আরও ৩৫% কমে যায়। পরের বছর তা ৪০% হ্রাস পায়, তারপরে ২০২১ সালে আরও ২৩% হ্রাস পেয়েছে।”
ওই নিউজ পোর্টালচি একাধিক আমলার সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিল। তাঁদের মতে, ক্ষমতায় আসার পর প্রথম চার বছর মোদী সরকার সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে জনমত গঠন করতে চাইছিল। তাই তারা বিজ্ঞাপনের পিছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিল।
কিন্তু এর পরে, বিজ্ঞাপন দেওয়ার আর প্রয়োজন পরেনি। একজন আমলার মতে এর কারণ, বেশিরভাগ মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলি ‘তাদের’ (সরকারের) অনুকূলে সংবাদ পরিবেশেন করতে শুরু করে দিয়েছিল।
তাহলে টাকা কোথায় যাচ্ছে? সর্বভারতীয় ওই ওয়েব পোর্চালটির প্রতিবেদ অনুযায়ী- লোকসভায় মোদী সরকরারে পেশ করা বিজ্ঞাপন ব্যয়ের হিসেব বলছে, ২০১৭-১৮ সালে গুগলে বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ করেছিল প্রায় এক কোটি টাকা। ২০২০-২১ সালে এটি বেড়ে হয় ২.৫ কোটি টাকা। এবং ২০২১-২২ সালে খরচ হয় ১.৬ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত, ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে গুগলে বিজ্ঞাপনে যে পরিমান ব্যয় করা হয়েছিল তা TV Today গ্রুপের (যেটি ভারতের অন্যতম পুরনো সংবাদ গোষ্ঠী এবং যারা জনপ্রিয় হিন্দি সংবাদ চ্যানেল Aaj Tak পরিচালনা করে) পাওয়া সরকারি বিজ্ঞাপনের থেকে অনেকটাই বেশি ছিল।
২০১৭ সালে এবং ২০২০-এর মধ্যে, যখন মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপন কমে গিয়েছিল তখন কিন্তু অনলাইন প্রচারের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করছিল কেন্দ্র।
এই সময়ের মধ্যে ডিজিটাল কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার অধীনে সরকারের ডিজিটাল প্রচার শাখা MyGov -কে অনুদান দেওয়া হয়।
ডিজিটাল কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াকে কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনে একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে দেখানো হয়। তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়্ছে, ২০১৬-১৭ সালে MyGov-কে মোদী সরকারের অনুদান দিয়েছিল ১৮.৮ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ সালে, এটি বেড়ে হয় ৫৮.২ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ সালে তা আরও বেড়ে হয় ৫৮.৫ কোটি এবং ২০১৯-২০ সালে তা অনেকটা বেড়ে হয় ৮৪.৮৮ কোটি টাকা।