কর্ণাটকে মোদী ম্যাজিক ভ্যানিশ, কাজে এল না BJP-র ধর্মীয় মেরুকরণের কৌশল
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাকি দিনটা কেমন যাবে, তা যদি সকাল দেখেই বোঝা যায়, তাহলে বলতে হয় আজ শনিবারের সকালটা কংগ্রেসের জন্য অন্য রকম বার্তা নিয়ে এসেছে। বিজেপিকে হারিয়ে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কর্ণাটকে সরকার গড়তে যাচ্ছে দলটি। বিধানসভায় পেতে যাচ্ছে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
সূর্য যখন মধ্য গগন পার করে পশ্চিমদিকে ঢলতে শুরু করেছে তখন দেখা গেল দক্ষিণ ভারতে বিজেপির হাতে থাকা একমাত্র রাজ্যটিও ফস্কে গেল। কোনও জেডিএসের ভরসায় নয়। কংগ্রেস নিজের ক্ষমতাতেই সরকার গড়তে চলেছে কর্নাটকে। এবং মল্লিকার্জুন খাড়্গের রাজ্যে কংগ্রেসের এই জয় কার্যত ঐতিহাসিক। বিজেপির দ্বিগুণ আসনে কর্নাটকে জিততে চলেছে কংগ্রেস।
আগেরবার কংগ্রেস পেয়েছিল ৮০টি আসন। এবার সেটা বেড়ে প্রায় ১৩০-এ পৌঁছে গিয়েছে। ২২৪ আসনের কর্নাটকে ম্যাজিক ফিগার ১১৩। বিজেপি আগেরবার পেয়েছিল ১০৪টি আসন। এবার গেরুয়া শিবিরকে টেনে ৬৬তে নামিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। গোটা ১৫ আসন কমেছে জেডিএসেরও।
কর্ণাটকের দক্ষিণাঞ্চলে ওল্ড মাইসুরু (মহীশূর) এলাকায় ভোটের ফল অনেককেই অবাক করেছে। এখানকার ৬৪টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস এগিয়ে আছে ৩৫টিতে। অথচ একসময় এসব আসনে জেডিএসের প্রভাব ছিল প্রশ্নাতীত। এবারের নির্বাচনে এই ৬৪ আসনের মধ্যে বিজেপি ১১টিতে এগিয়ে রয়েছে। পাঁচ বছর আগেও এখানে বিজেপির অবস্থান ছিল না বললেই চলে।
কর্নাচকের ফলাফল থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমত, কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ম্যাজিক্যাল (মোদি ম্যাজিক) ভাবমূর্তি কাজে এল না। এই রাজ্যে বিজেপি পুরো প্রচারপর্ব চালিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর ‘ক্যারিশমার’ ওপর ভর করে। রাজ্যবাসী তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস এই নির্বাচনকে পুরোপুরি ‘হাইপার লোকাল’ করে তুলেছিল। ব্যাপক মাত্রার দুর্নীতিকে তারা হাতিয়ার করেছে। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই সরকারকে ‘৪০ শতাংশ কমিশন সরকার’ বলে অভিহিত করেছেন। মানুষ তা গ্রহণ করেছে। ব্যালটে দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিয়েছে।
তৃতীয়ত, বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিতে কর্ণাটকের মানুষ প্রভাবিত হয়নি। দেড় বছর ধরে বিজেপি ‘হিজাব–হালাল–আজান–আমিষের’ রাজনীতি করে এসেছে। প্রচারপর্বের শেষের দিকে বজরঙ্গ দল–পিএফআইয়ের মতো উগ্র ধর্মান্ধ দলকে নিষিদ্ধ করার যে প্রতিশ্রুতি কংগ্রেস দিয়েছিল, বিজেপি তাকে হাতিয়ার করেছে। বজরঙ্গ দল এবং বজরঙ্গবলীকে সমার্থক করে প্রধানমন্ত্রী মোদী পর্যন্ত সরব হন। শেষ দিকে তিনি ভাষণ শেষ করেছেন ‘জয় বজরঙ্গবলী’ বলে। এই মেরুকরণ কাজে দেয়নি।
চতুর্থত, বিজেপির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ তত্ত্ব রাজ্যবাসী খারিজ করেছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী মোদী ব্যাপক উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছেন, তাতে মানুষ ভরসা রাখতে পারছে না।
মণিপুর যখন জ্বলছে তখন মোদী শান্তির বার্তা দিয়ে একটি টুইট করারও সময় পাননি। কারণ তিনি ব্যস্ত ছিলেন কর্নাটকের ভোট প্রচারে। সেই ভোটে দেখা গেল মুখ পুড়ল বিজেপির। বিপুল জয় ছিনিয়ে নিল কংগ্রেস।
কর্ণাটকে এবার বিজেপির হারকে ‘মোদীর পরাজয়’ বলে সরাসরি চিহ্নিত করার যথেষ্ট কারণও আছে। নির্বাচন ঘোষণার আগে থেকে প্রচার শেষ হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বারবার ওই রাজ্যে গেছেন। শেষ সাত দিনে ২১টি জনসভা করেছেন, রোড শো করেছেন চারটি। পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, কাট আউটে স্রেফ তাঁরই মুখ প্রাধান্য পেয়েছে। শুধু তা–ই নয়, শীর্ষ নেতারা পর্যন্ত জনসভায় প্রার্থীদের উপস্থিতি সত্ত্বেও মোদীর নামে ভোট চেয়েছেন। জনতাকে বলেছেন, তাঁরা যেন প্রতিটি ভোট মোদীকে দেন। এমন ‘মোদীময়’ প্রচার সত্ত্বেও এভাবে মুখ থুবড়ে পড়ার পর স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই ফল ‘মোদীর পরাজয়’ বলে বর্ণনা করছেন। আর বিজেপি এখন নির্বাক।