কেমন ছিল উত্তম-সুপ্রিয়ার যৌথ জীবন?
ভালোবাসার মানুষকে আপন করে নেওয়ার পথে সমাজ, সংসারের কোনো বাধাই মানেননি মহানায়ক। লোক নিন্দা, অপবাদ সব কিছু মাথা পেতে নিয়েও জীবনের সতেরটি বছর একসঙ্গেই বসবাস করে গেছেন উত্তম কুমার ও সুপ্রিয়া দেবী। আইনত বিয়ে করতে পারেননি কিন্তু বিবাহিত দম্পতির মতোই পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন তারা।
অভিনয় জীবনের প্রথমদিকে যখন একের পর এক ছবি ফ্লপ হচ্ছে তখন ‘বসু পরিবার’ সিনেমায় এক যৌথ পরিবারের আদর্শবাদী বড় ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সিনেমায় সুপ্রিয়া দেবী ছিলেন তার বোনের ভূমিকায়। এটিই উত্তম-সুপ্রিয়া অভিনীত প্রথম ছবি।
১৯৬০ সালে মুক্তি পায় উত্তম-সুপ্রিয়া জুটির ব্যবসাসফল ছবি ‘শুন বরনারী’। সহশিল্পী হিসেবে দুজন মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব, জন্ম নেয় প্রেম। এই নিয়ে গৌরী দেবীর সঙ্গে উত্তম কুমারের দাম্পত্য কলহ চরম আকার ধারণ করে। ১৯৬৩ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর গিরীশ মুখার্জি রোডের পৈতৃক বাসভবন থেকে উত্তম কুমার চলে আসেন সুপ্রিয়া দেবীর ময়রা রোডের ফ্ল্যাটে। জীবনের বাকি সতেরটি বছর তিনি সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গেই অতিবাহিত করেন।
কেমন ছিল তাদের জীবন?
সুপ্রিয়া দেবীর স্মৃতিকথা ‘আমার জীবন আমার উত্তম’ থেকে জানা যায়, ১৯৬২ সালের ২রা ডিসেম্বর তাদের বিয়ে হয় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায়। বিয়েতে সুপ্রিয়ার বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উত্তম কুমারের কয়েকজন বন্ধুও ছিলেন। ৫ই ডিসেম্বর তারা বিবাহত্তোর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন যেখানে চলচ্চিত্র জগতের প্রচুর অতিথির সমাগম হয়। তবে গৌরী দেবীর সঙ্গে আইনগতভাবে বিচ্ছেদ না হওয়ায় তারা রেজিস্ট্রি করতে পারেননি।
বিয়ের পরও অনেক ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন তারা। উত্তম-সুপ্রিয়া অভিনীত ‘চিরদিনের’, ‘বনপলাশীর পদাবলী’, ‘কাল তুমি আলেয়া’, ‘লাল পাথর’, ‘শুন বরনারী’, ‘মন নিয়ে’, ‘শুধু একটি বছর’, ‘সন্ন্যাসী রাজা’ ইত্যাদি সিনেমা ব্যবসাসফল হওয়ার পাশাপাশি সমালোচকদের প্রশংসাও পায়। বিশেষ করে ‘চিরদিনের’ উত্তম-সুপ্রিয়া অভিনীত দারুণ রোমান্টিক ছবি।
যৌথ জীবনে অনেক অপবাদ ও লোকনিন্দা সহ্য করতে হয়েছে উত্তম কুমার ও সুপ্রিয়া দেবীকে। কিন্তু তাদের প্রেম যে সত্যিই চিরদিনের তা প্রমাণিত হয়েছে।