মহানায়কের যে ছবিগুলি কখনো পুরনো লাগবে না
মহানায়ক উত্তম কুমার অভিনয় করেছেন প্রায় ২১২ টি চলচ্চিত্রে। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার। মহানায়কের মৃত্যুবার্ষিকীতে টিম দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে ১২টি ছবির তালিকা যেগুলি কাহিনী, চরিত্র, সংলাপ, পরিচালনা – সব দিক দিয়েই অসাধারণ।
দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকাঃ-
১. হারানো সুর (১৯৫৭)
স্মৃতি হারানো এক ব্যবসায়ী এবং তার ডাক্তারের অসামান্য এক প্রেম কাহিনী, যা আজও ব্যাকুল করে তোলে দর্শকের হৃদয়। উত্তম-সুচিত্রা জুটির অন্যতম সেরা ছবি।
২. অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি (১৯৬৭)
পর্তুগিজ বাবা কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি এবং পেশাদার বাইজি শাকিলার প্রেমকাহিনী ও বিয়োগান্তক পরিণতি এ ছবির মূল উপজীব্য হলেও কবি হিসেবে অ্যান্টনির অন্তর্দ্বন্দ্ব, সামাজিক সংঘাত উঠে এসেছে এ ছবিতে। এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য উত্তম কুমার ১৯৬৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
৩. খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন (১৯৬০)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ছোট গল্প অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিতে সম্পূর্ণ নন-গ্ল্যামারাস একটি ভূমিকায় অভিনয় করেন উত্তম কুমার। অভিজাত পরিবারের বিশ্বস্ত গৃহভৃত্য রাইচরণ নিজের ছেলেকে প্রভুর হাতে সমর্পণ করে দুঃখী রাইচরণ হারিয়ে যায় জনারণ্যে।
৪. সপ্তপদী (১৯৬১)
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটি উত্তম-সুচিত্রা জুটির সবচেয়ে জনপ্রিয় ছবিও বটে। ১৯৬১ সালে ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়।
৫. রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮)
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাস থেকে অংশ বিশেষ নিয়ে এই চলচ্চিত্র। পিরিয়ডিকাল ছবি হিসেবে এটি ছিল সুনির্মিত। শ্রীকান্তর উদাসীনতা, পরিহাসপ্রিয়তা এবং রাজলক্ষ্মীর প্রতি প্রেমকে সার্থকভাবে রূপালি পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন উত্তম কুমার।
৬. সন্ন্যাসী রাজা (১৯৭৪)
এখানে উত্তমের বিপরীতে ছিলেন সুপ্রিয়া দেবী। বিখ্যাত ভাওয়াল সন্ন্যাসীর কেস থেকে অনুপ্রাণিত। এখানে বিলাসী ও উদার হৃদয় রাজা এবং পরবর্তীতে সন্ন্যাসীর ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেন উত্তম কুমার।
৭. স্ত্রী (১৯৭১)
বিমল মিত্রের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিতে বিলাসী ও লম্পট জমিদারের চরিত্র ফুটিয়ে তোলেন উত্তম কুমার। উত্তম-সৌমিত্র অভিনীত মুষ্টিমেয় ছবির মধ্যে ‘স্ত্রী’ অন্যতম। জমিদারের স্ত্রীর ভূমিকায় ছিলেন আরতি ভট্টাচার্য। এটিও পিরিওডিকাল ফিল্ম।
৮. শেষ অংক (১৯৬২)
উত্তম কুমার যে গুটিকয় চলচ্চিত্রে নেতিবাচক ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তার মধ্যে একটি হল ‘শেষ অংক’। সাসপেন্সধর্মী ছবিটিতে অভিনয করেছিলেন শর্মিলা ঠাকুর, সাবিত্রী চ্যাটার্জি, বিকাশ রায়, উৎপল দত্ত ও তরুণ কুমার।
৯. ভ্রান্তিবিলাস (১৯৬৩)
উত্তম কুমার অভিনীত কমেডি সিনেমাগুলোর মধ্যে সেরা বলা যায় ‘ভ্রান্তিবিলাস’কে। শেক্সপিয়রের ক্ল্যাসিক নাটক ‘কমেডি অফ এররস’ অবলম্বনে নির্মিত। উত্তম কুমারের বিপরীতে ছিলেন সাবিত্রী চ্যাটার্জি এবং সন্ধ্যা রায়। অন্যতম প্রধান ভূমিকায় ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।
১০. অমানুষ (১৯৭৫)
উত্তম কুমারের সফল হিন্দী ছবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায় ‘অমানুষ’। এটি দ্বিভাষিক ছবি। উত্তম কুমারের বিপরীতে ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। খলনায়কের ভূমিকায় উৎপল দত্ত। ছবিটি ১৯৭৬ সালে ফিল্মফেয়ারের আসরে ৯ টি বিভাগে নমিনেশন পায় এবং দুটি পুরস্কার জয় করে।
১১. মেমসাহেব (১৯৭২)
উত্তম কুমার এবং অপর্ণা সেন। সিনেমাটিতে দুজনে অভিনয়ে একে অপরকে টেক্কা দিয়েছেন। আর সুন্দর চিত্রনাট্য। একদম স্বতঃস্ফূর্ত। কোথাও মনে হবে না একটুকু বাড়িয়ে বলা আছে। বিশেষত দুজনের মধ্যেকার প্রেমের কথাবার্তাগুলো, অভিনয়টাও স্বতঃস্ফূর্ত।
১২. নায়ক (১৯৬২)
মহানায়ক এবং বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচালকদ্বয় যখন একসাথে কাজ করেন, তখন মিরাকেল হওয়াটাই স্বাভাবিক। ‘নায়ক’ উত্তম কুমারের অভিনয় জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ। আজও সিনেমাপ্রেমীদের মনে এক আলোড়ন সৃষ্টি করে ছবিটি।