দেশ বিভাগে ফিরে যান

কর্ণাটকে ভরাডুবির পর এবং বাদল অধিবেশনের আগে মণিপুর নিয়ে কিছুটা ‘আগ্রহ’ দেখালেন শাহরা!

May 17, 2023 | 2 min read

মণিপুর নিয়ে কিছুটা ‘আগ্রহ’ দেখালেন শাহরা!

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ক্ষণস্থায়ী শান্তির পর মণিপুর আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল এ মাসের প্রথম সপ্তাহে। এবার সংঘাত উপজাতি বনাম অনুপজাতি – কুকি বনাম মেইতেই। মে মাসের ৩ তারিখে রাজ্যের দশটি জেলায় তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় সমস্ত উপজাতির এক মিলিত পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে। এই পদযাত্রা সংগঠিত হয়েছিল মণিপুর হাইকোর্টের মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি বলে ঘোষণা করা যায় কিনা, তা রাজ্য সরকারকে চার সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশের প্রতিক্রিয়ায়। এখনও পরিস্থিতি থনথমে মণিপুরে। শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন।

প্রায় দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনও ব্যাপক ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেনি রাজ্যের বিজেপি সরকার। কেন্দ্রকেও খুব একটা উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে না। যা নিয়ে বিভন্নমহলের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।

প্রশাসনের তরফে টুকরো টুকরো কিছু প্রচেষ্টা করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে গত ৩ মার্চ থেকে তিনি মৌনতা রক্ষা করে চলেছেন!

যেমন, মণিপুর যখন জ্বলছে তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কর্ণাটকে প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গের দলীয় বিষয় নিয়ে মাথা ঘামালেও উভয়কেই মণিপুরের শান্তি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে মণিপুরবাসীদের ভরসা যোগাতে দেখা যায়নি।

মোদী, অমিত শাহের নীরবতা সুশীল সমাজের একাংশকে অবাক করেছে। যাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসাররাও রয়েছেন। তাঁরা অবাক, কেন্দ্রের তরফে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কোনও রকম নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কি না তা সাধারণ মানুষকে জানানো হয়নি।

অনেকেই এই প্রসঙ্গে, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের কথা উল্লেখ করছেন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন পুলওয়ামায় সেনাবাহীনির উপর জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যপাল মালিককে চুপ থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুধুমাত্র ১৪ মে, সোমবার সন্ধ্যায় অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংকে তাঁর মন্ত্রিসভার চার সদস্যকে নিয়ে দিল্লি আসতে বলেন। তাঁদের মধ্যে দিল্লিতে বৈঠকও হয়। কিন্তু কি আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল ওই দিনই কর্ণাটক নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল এবং বিজিপি’র ভরাডুবি হয়েছিল। জানা গিয়েছে, এদিন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন.বীরেন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংকে হিংসা থামাতে বিশেষ বার্তা দেন। হিংসা ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং হিংসা থামাতে কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত রকম সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে এদিন বিবৃতি দিয়ে মণিপুরের বাসিন্দাদের শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়েছে। মেইতি সহ অন্যান্য সকল জনগোষ্ঠী সুবিচার পাবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। অনেকেই বলছে এতদিন পর এদিন মণিপুর নিয়ে কেন্দ্রের বিবৃতি আসলে কর্ণাটকে বিজেপি’র হারের ধাক্কার ফল। সামনেই সংসদের বাদল অধিবেশন। মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের কড়া আক্রমণের মুখে পড়তে হবে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন অমিত শাহরা। তাই তার আগে এই বিবৃতিটুকু দিয়ে দায় সারতে চাইলেন তাঁরা।

যদিও প্রাক্তন আমলারা রাজ্য প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলেছে, “গুরুতর জাতিগত বিভাজনের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে, ফলস্বরূপ আজকের এই পরিস্থিতি।”

বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করে থাকে, ‘ডাবল-ইঞ্জিন সরকার’ থাকলে ‘বিকাশ’-এর বন্যা বয়ে যাবে। কিন্তু মণিপুরে দেখা যাচ্ছে ‘ডাবল-ইঞ্জিন সরকারে’র দৌলতে নূন্যতম ত্রাণ সাধারণ মানুষের পৌঁছচ্ছে না!

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Manipur violence, #Amit shah, #bjp, #politics, #Manipur

আরো দেখুন