মোদী জমানায় ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আক্রমণের শিকার, উদ্বেগ প্রকাশ মার্কিন রিপোর্টে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ভারতের ধর্মীয় হিংসার বিষয়ে ফের সরব মার্কিন মুলুক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় মোদী সরকার ভারতে চলা ক্রমাগত ধর্মীয় হিংসার নিন্দা করুক। মোদীর মার্কিন সফরের এক মাস আগে, এহেন বার্তায় বেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সোমবার, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে মুসলমান ও খ্রিস্টানসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঘটনা উঠে এসেছে রিপোর্টে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্তার কথায়, ভারত বিপুল সম্ভাবনার দেশ, কিন্তু এ দেশে (ভারতে) ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নিরবিচ্ছিন্নভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। এতে তারা দুঃখিত। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের। তারা মোদী সরকারকে এই ধর্মীয় হিংসার নিন্দায় সরব হতে বলছেন। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি যারা বিদ্বেষমূলক কথাবার্তায় বলছেন, তাদের এমন আচরণ বন্ধ করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে, বলেই মত ওই মার্কিন আধিকারিকের।
মুসলমানদের গণহত্যার দ্বারা খুন করা, ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক ভাষণ, হিংসা, ধর্মীয় উপাসনালয়গুলিতে আক্রমণ, বাড়িঘর ধ্বংসের জন্য উন্মুক্ত আহ্বান ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে এসেছে রিপোর্টে। ভারতীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা সরাসরি কথা বলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মোদীর রাজ্য গুজরাতে মুসলমানদের উপর আক্রমণ, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাও উঠে এসেছে রিপোর্টে।
ভারত ১৪০ কোটি মানুষের দেশ, তার ১৪ শতাংশ মানুষ মুসলমান। খ্রিস্ট ধর্মের মানুষ রয়েছেন প্রায় দুই শতাংশ। অন্যদিকে, সংখ্যা গরিষ্ঠই হিন্দু প্রায় আশি শতাংশ। (মার্কিন রিপোর্ট অনুযায়ী পরিসংখ্যান)। ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, বিশ্বের সর্ববৃহদ গণতন্ত্র। এমন দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ অভিপ্রেত নয়। মার্কিন মুলুক দীর্ঘ দিন ধরেই এর বিরুদ্ধে সরব। কিন্তু ভারতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার বিরুদ্ধে ক্রমাগত পিছু হঠে। সংশোধন তো দূরস্থ, উল্টে ক্রমেই বাড়ছে আক্রমণ। ইন্টারন্যাশনল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের মার্কিন কমিশন ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। সংস্থাটি তার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, মোদী সরকার ২০২২ সালে জাতীয় পর্যায়ে, বিভিন্ন রাজ্যে স্থানীয় পর্যায়ে ধর্মীয় বৈষম্যের প্রচার ও প্রয়োগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ধর্মান্তরকরণ, হিজাব পরা এবং গরু জবাই ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
ইউএসসিআইআরএফ-এর মত, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভারতকে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রসঙ্গে একটি বিশেষ উদ্বেগের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। চলতি বছরের শেষ দিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রক ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে বিশেষ উদ্বেগের দেশগুলির তালিকা প্রকাশ করবে। কার্যত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে, সেখানে ভারত থাকবেই। তবে যথারীতি মোদী সরকার মার্কিন মুলুকের এই দাবি অর্থাৎ ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ হাওয়ার দাবি অস্বীকার করেছে।