হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর জন্য আর অপেক্ষা করতে পারলাম নাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়
১৯৮১ সালের ১৯ জুন। স্কুল থেকে ফিরে শিক্ষিকা নমিতা মুখোপাধ্যায় দেখলেন, সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে ওঁর স্বামীর দেহ! পাশে একটি সুইসাইড নোট “হার্ট অ্যাটাকের অপেক্ষায় ক্লান্ত দিন যাপন শেষ হোক এবার”।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় – একজন কৃতী বাঙালি বিজ্ঞানীর নাম, যা বিশ্বের দিকে দিকে সমাদৃত হতে পারত। কিন্তু, বাস্তবে উনি পেয়েছিলেন চরম গঞ্জনা। ভারতে IVF পদ্ধতি নিয়ে কাজ প্রথম কাজ করেছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তিনিই ভারতের প্রথম টেস্ট টিউব বেবি দুর্গার সৃষ্টিকর্তা।
রবার্ট এডওয়ার্ডস এবং প্যাট্রিক স্টেপটো পৃথিবীর প্রথম টেস্ট টিউব বেবি লুই ব্রাউন সৃষ্টি করেন। এর ঠিক ৬৭ দিন পর অর্থাৎ ৩ অক্টোবর জন্মলাভ করে দুর্গা। নিজের ফ্ল্যাটকেই তিনি গবেষণাগারে পরিণত করেন৷ চরম অর্থসঙ্কটেও চালিয়ে যান তাঁর গবেষণা। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলস্বরূপই ১৯৭৮-এর ৩ অক্টোবর ভারতের প্রথম টেস্ট টিউব বেবি জন্ম নেয়।
এই বিরল কৃতিত্বের পুরস্কার স্বরূপ তিনি পেয়েছিলেন নিদারুন অবহেলা আর অপমান। জাপান থেকে আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে তাঁর বক্তব্যের আহ্বান এলেও তৎকালীন বাম সরকার তাঁকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি তো দেয়নি, উল্টে তাঁর গবেষণার সত্যতা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করে। NRS থেকে ওঁকে বাঁকুড়ার মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয় যাতে উনি গবেষনার ন্যূনতম সুযোগ না পান!
একটা মানুষকে যতরকমভাবে পর্যদুস্ত করা যায়, তার কোনওটাতেই কোনও খামতি রাখেনি বাম সরকার৷ ডা. মুখোপাধ্যায়ের অপরাধ ছিল, ওঁর গবেষণার ব্যাপারে তৎকালীন সরকারের আগে সংবাদমাধ্যমো খবরটা জেনে গিয়েছিলো! উনি সরকারের প্রতি কোনও আনুগত্য দেখাননি।
২০০৩ সালে ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের গবেষণা স্বীকৃতি লাভ করে। ২০১০ সালে প্রকাশিত ডিকশনারি অব মেডিকেল বায়োগ্রাফিতে চিকিৎসাক্ষেত্রে পৃথিবীর ১১০০ টি যুগান্তকারী আবিষ্কারের তালিকায় কলকাতা থেকে রোনাল্ড রস এবং উপেন্দ্রনাথ ব্রক্ষ্মচারীর সঙ্গে জায়গা করে নেন ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও।
২০১০ সালেই প্রথম টেস্ট টিউব বেবির সৃষ্টিকর্তা হিসাবে চিকিৎসাশাস্ত্রে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পান রবার্ট এডওয়ার্ডস। হয়তো এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায়! যা হতে দেয়নি সেইসময়কার বাম সরকার ৷
তথ্যসূত্র: গুগল, এই মুহূর্তে, রমাপদ চৌধুরী রচিত উপন্যাস ‘অভিমন্যু’