কানে কানে কলকাতা কানেকশন বিভাগে ফিরে যান

মন্ডা ক্লাব! এই নামে ক্লাব ছিল কলকাতায়?

October 30, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ১৯০৭ সালে কলেজের পড়া শেষ করে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সুকুমার গড়ে তুলেছিলেন ‘ননসেন্স ক্লাব’। তাঁদের ২২ নম্বর সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতে ক্লাবের আসর বসত। ক্লাবেরই মুখপত্রের নাম ছিল সাড়ে বত্রিশ ভাজা। ননসেন্স ক্লাবের জন্যই সুকুমার ‘ঝালাপালা’ এবং ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’ নাটক দুটি লিখেছিলেন। যার দু-ঝলক, সত্যজিৎ তাঁর সুকুমার রায় তথ্যচিত্রে দেখিয়েছিলেন। সুকুমারের ভাই বোন, আত্মীয়রা এই ক্লাবের সদস্য ছিলেন, সেই সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন বিখ্যাত কিছু মানুষজনও। সুকুমার রায় ছিলেন আড্ডাপ্রিয় মানুষ। তাঁকে ঘিরেই আড্ডাবাজ প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বদের আড্ডা-আসরের বৃত্ত গড়ে উঠেছিল।

১৯১১ সালে সুকুমার বিলেত গেলে, এই ক্লাব বন্ধ হয়ে যায়। দেশে ফেরার পরে ১৯১৫ সালে ফের আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ক্লাব গড়েন সুকুমার। পূর্বতন ননসেন্স ক্লাবেরই আপডেট ভার্সন ছিল এটি। নাম মন্ডা ক্লাব। না না মিষ্টির কোনো ব্যাপার নেই! প্রতি সোমবার ক্লাবের আসর বসত, সেই কারণে একে ‘Monday Club’ বলেই ডাকা হত। এই ক্লাবের আড্ডার আসরে থাকত ভুরিভোজের আয়োজন, তাই সুকুমার এর ডাক নাম দিয়েছিলেন ‘মন্ডা ক্লাব’। ক্লাব তো নয় যেন চাঁদের হাট। সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, অতুলপ্রসাদ সেন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, কালিদাস নাগ, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ প্রমুখ। কেবল সদস্যরাই নয়, মন্ডা ক্লাব সম্পাদক, সভাপতিরও পদ থাকত। সুকুমার সেই সব পদ অলংকৃতও করেছেন।

আগন্তুকে সত্যজিৎ উৎপল দত্তকে দিয়ে আড্ডা অ্যাট দ্যি হাইয়েস্ট লেভেল বলিয়েছিলেন, হয়ত সেই সবই হত এই আড্ডা পীঠে। মন্ডা ক্লাবে যেমন রঙ্গরসিকতাই চলত, তেমন নানারকমের সুগভীর বিষয় যেমন কালিদাসের জিওগ্রাফি, ব্রাহ্মগণ হিন্দু কিনা, বৈজ্ঞানিক ও সাহিত্যিক ইতিহাস ইত্যাদি নিয়ে আলোচনাও চলত। আবার ক্লাবের প্রতিবাদ সভা হত। ১৯১৭ সালের জুলাই মাসে মন্ডা ক্লাবের পক্ষ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। ১৯১৯ সাল পর্যন্ত মন্ডা ক্লাব ভালভাবেই চলেছিল। তারপর নানা কারণে এই ক্লাব বন্ধ হয়ে যায়। ১৯২৩ সালে সুকুমার রায় মারা গেলে ক্লাব পুরোপুরিই ভেঙে যায়।

ক্লাবের তৃতীয় বছরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত একটি গান লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের “আমাদের শান্তিনিকেতন”-এর সুরে গানটি এরকম:

“মন্ডা-সম্মিলন

আমাদের মন্ডা-সম্মিলন।

আরে না – তা’ না, না –

আমাদের Monday সম্মিলন।

আমাদের হল্লারই কুপন।

তার উড়ো চিঠির তাড়া

মোদের ঘোরায় পাড়া পাড়া,

কভু পশুশালে হাসপাতালে আজব আমন্ত্রণ।

কভু কলেজ-ঘাটে ধাপার মাঠে ভোজের আকর্ষণ”

ক্লাবের আমন্ত্রণপত্রগুলি ছড়ার আকারে লেখা হত। সভ্যরা অন্তমিল যুক্ত এই সব মজার ছড়াগুলো লিখতেন। সুকুমারও এমন ছড়া লিখেছেন।

সম্পাদক বেয়াকুব

কোথা যে দিয়েছে ডুব-

এদিকেতে হায় হায়

ক্লাবটি তো যায় যায়।

তাই বলি সোমবারে

মদগৃহে গড়পারে

দিলে সবে পদধূলি

ক্লাবটিরে ঠেলে তুলি।

রকমারি পুঁথি কত

নিজ নিজ রুচিমত

আনিবেন সাথে সবে

কিছু কিছু পাঠ হবে

করজোড়ে বারবার

নিবেদিছে সুকুমার।

শনিবার ১৭ই

সাড়ে পাঁচ বেলা,

গড়পারে হৈ হৈ

সরবতি মেলা।

অতএব ঘড়ি ধরে

সাবকাশ হয়ে

আসিবেন দয়া করে

হাসিমুখে লয়ে।

সরবৎ সদালাপ

সংগীত-ভীতি

ফাঁকি দিলে নাহি মাপ,

জেনে রাখ- ইতি।

কেউ বলেছে খাবো খাবো,

কেউ বলেছে খাই

সবাই মিলে গোল তুলেছে,

আমি তো আর নাই।

ছোটকু বলে, রইনু চুপে

ক’মাস ধরে কাহিল রূপে!

জংলি বলে ‘রামছাগলের

মাংস খেতে চাই’।

যতই বলি ‘সবুর কর’ –

কেউ শোনে না কালা,

জীবন বলে কোমর বেধে,

কোথায় লুচির থালা?

খোদন বলে রেগেমেগে

ভীষণ রোষে বিষম লেগে –

বিষ্যুতে কাল গড়পারেতে

হাজির যেন পাই।

ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: মোঃ রবিউল ইসলাম
তথ্য গবেষণা: সৌভিক রাজ

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kane Kane Kolkata Connection, #Kolkata Connection, #Monday Club, #Old Kolkata, #Kolkata, #Sukumar Ray

আরো দেখুন