দেশ বিভাগে ফিরে যান

নির্ভয়া আন্দোলনের মতো ইতিহাস তৈরির পথে কুস্তিগিরদের আন্দোলনও?

May 20, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের গ্রেপ্তারির দাবিতে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসেছেন দেশের সেরা কুস্তিগিরদের একাংশ। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন তাঁরা।

কিন্তু টানা ধরনা, আদালতের হস্তক্ষেপ। তাতেও কাজ হচ্ছে না। বহাল তবিয়তে ঘুরছেন ব্রিজভূষণ শরণ সিং। শেষে তদন্তকারী আধিকারিকদের উপর বিরক্ত হয়ে কেন্দ্রের দেওয়া বিভিন্ন সম্মান ফেরত দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগাট, বজরং পুনিয়ারা। উল্টে তদন্তকারী আধিকারিকরা নির্যাতিতাদের কাছে তাঁদের অভিযোগের প্রমাণ হিসাবে ভিডিও/অডিও ক্লিপ ও ছবি চেয়েছেন। এতে বেজায় চটেছেন কুস্তিগিররা। তাঁদের বক্তব্য, কারও উপর যখন যৌন নিগ্রহ হয়, তখন কি কেউ তা রেকর্ড করে রাখে? আরও একটি চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন কুস্তিগীররা। যন্তরমন্তরে আন্দোলনে বসে থাকা এক কুস্তিগির জানান, তদন্তকারীদের একজন বলেছেন, কোনও বাবা যেভাবে তাঁর সন্তানের গায়ে হাত দেন, ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংও সেভাবেই হাত দিয়ে থাকতে পারেন।

সবমিলিয়ে ক্ষুব্ধ, হতাশ কুস্তিগিররা বলছেন, যেভাবে তদন্ত চলছে, তাতে তাঁদের কোনও ভরসা নেই। এই পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, ভারতীয় মহিলারা যখন ক্রীড়া জগতে আন্তর্জাতিক স্তরে দেশকে এত সম্মান এনে দিয়েছেন, তাদের সঙ্গে কি যথাযথ আচরণ করছে ফেডারেশন বা সরকার?

বিখ্যাত কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগাট এবং সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়া সহ, জানুয়ারিতে যন্তর মন্তরে একটি বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন, রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (WFI) এর সভাপতি এবং বিজেপি সাংসদ ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং দ্বারা যৌন হয়রানির অভিযোগের ঘটনাগুলি প্রকাশ করে।

ফোগাট অভিযোগ করেছিলেন যে “কোচরা মহিলাদের হয়রানি করছেন, এবং কিছু কোচ, যাএরা ফেডারেশনের প্রিয় তাঁরা মহিলা কোচদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন। তাঁরা খেলতে আসা মেয়েদের নানাভাবে যৌন হয়রানি করে। WFI প্রেসিডেন্ট অনেক মেয়েকে যৌন হয়রানি করেছেন।

গোটা ঘটনা যে দিকে যাচ্ছে তাতে অনেকেই বিরক্ত। প্রশ্ন উঠতে শুরু এরকম একটি স্পর্ষকাতর বিষয় নিয়ে যখন অভিযোগ উঠেছে তখন সরকারকে আরও উদার মনোভাব নিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত ছিল।

ডব্লিউএফআই সভাপতির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনার পরও যেভাবে বিষয়টিকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, তা আদতে পুরুষতান্ত্রিক এক সমাজের কথাই বলছে। যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’র কথা বলছেন! দেশের শীর্ষস্থানীয় মহিলা ক্রীড়াবিদরা যখন যৌন হয়রানির অভিযোগ আনার পর থেকে প্রতি মুহূর্তে হোচট খাচ্ছেন তখন দেশের সাধারণ মহিলাদের কি অবস্থা তা বোধ সহজেই কল্পনা করা যায়। যে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক জায়গায়, যেখানে পুরুষরা ক্ষমতায় রয়েছেন, সেখানে অল্পবয়সী, দুর্বল মহিলাদের অবস্থা কতটা করুণ তা অনুমান করা যায়। তাই সরকারের উচিত ছিল এই বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যা থেকে সকলের কাছে একটি সদর্থক বার্তা পৌঁছে দেওয়া যেত। কারণ, এই ঘটনাটি শুধু দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রেই নয় বরং সমস্ত মহিলা এবং নতুন প্রজন্মের মেয়েদের উপর প্রভাব ফেলেছে৷

POSH আইনের সমস্ত কর্মক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক – যার মধ্যে ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান এবং খেলার স্থানগুলিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একটি অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (ICC) থাকে, যেখানে দশ বা তার বেশি লোককে নিয়োগ করা হয়৷

২০১২-১৩ সালের নির্ভয়া আন্দোলনের সময় নারী, সমাজকর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদের সময় PoSH আইনটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। এই আন্দোলনে ভারতীয় মহিলাদের উপর যৌন হিংসার ধারণাটাই বদলে দিয়েছিল। ক্ষমতার ব্যবহার করে কিভাবে মহিলাদের যৌন হয়রানি করা হয় তা সেময়ের আন্দোলনের মাধ্যমে উঠে এসেছিল। মহিলাদের ‘ভয়মুক্ত স্বাধীনতা’র বিষয়টি ওই সময় জনসাধারণের মনে উত্থাপিত হয়েছিল। পরে যা ভর্মা কমিটির রিপোর্চের ভিত্তিতে আইনে পরিণত হয়েছিল।

মহিলা কুস্তিগিরদের বর্তমান এই আন্দোলন ভারতের মহিলাদের জেগে ওঠার জন্য নতুন একটি সন্ধিক্ষণে পরিণত হচ্ছে। যা থেকে দ্রুত শিক্ষা নিতে হবে দিল্লি পুলিশ, ক্রীড়া মন্ত্রক এবং ভারতের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলিকে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#India, #modi govt, #Jantar Mantar, #Indian wrestlers

আরো দেখুন