বৌমাষষ্ঠী: বৌমাদের জন্যেও বরাদ্দ হোক ‘রাজকীয় আদর-আপ্যায়নের’ একটি দিন

পরবর্তীতে বাঙালির ঘরে ঘরে এই লোকাচারটি জামাইকে রাজকীয় যত্ন-খাতির করার পার্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

May 25, 2023 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
বৌমাষষ্ঠী, ছবি সৌজন্যে Arpita Mitra

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: কেবল রচনা আর গুরুগম্ভীর প্রবন্ধে নয়, লিঙ্গ সাম্যতা আসুক সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে। জামাইরা যেমন খাতির পান জামাইষষ্ঠীর দিন, তেমনই আদর-যত্ন পাক বাড়ির বৌমারাও। হালে সমাজ মাধ্যমের দৌলতে আমরা বৌমাষষ্ঠীর ছবি, ভিডিও দেখি। কিন্তু এটা কি হালের ফ্যাশন নাকি আদত রীতি বা লোকাচারটি এমনই ছিল?

অন্যান্য ব্রতগুলির জামাইষষ্ঠী নারী কেন্দ্রীক অনুষ্ঠান। কিন্তু বাস্তবে সেই অনুষ্ঠানের ভরকেন্দ্রেও পুরুষই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরাণ মতে, স্কন্ধ ষষ্ঠী পুজোয় বাবা মা মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি থেকে আমন্ত্রণ করেন যাতে সে মা ষষ্ঠীর কৃপায় সন্তান লাভ করতে পারে। অনুষ্ঠানের নাম ষষ্ঠী পুজো। কিন্তু নিজের মেয়ের মঙ্গলার্থে আয়োজিত ষষ্ঠীতে, জামাই শব্দটি বসিয়ে অনুষ্ঠানের পালন সম্পূর্ণ রূপে জামাইয়ের দিকে ঝুঁকে গেছে। পরবর্তীতে বাঙালির ঘরে ঘরে এই লোকাচারটি জামাইকে রাজকীয় যত্ন-খাতির করার পার্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জামাইয়ের নতুন বস্ত্র প্রাপ্তি ও পঞ্চব্যঞ্জনে ভুরিভোজের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

যুগে যুগে এমনই হয়ে এসেছে। কিন্তু আজ দিন বদলেছে, সাম্যের অধিকার সচেতন শিক্ষিতা বঙ্গললনারা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। সমাজের আনাচে-কানাচে তাই বৌমাষষ্ঠী পালনের তীব্র দাবি উঠে আসছে। শ্বশুরবাড়িতে জামাই যে আদর-আপ্যায়ন পায় ,অনুরূপ একটি বিশেষ দিন বৌমাদের জন্য তাদের শ্বশুরবাড়িতেও বরাদ্দ হোক। তাদেরও তো ইচ্ছে হয়, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদের একটু আদর-আপ্যায়ন করুক। বছরে একটি দিন না হয় তাদের রাজকীয় খাতির করা হল।

বৌমাষষ্ঠীর দিনে সকালে শ্বশুরমশাই বৌমার জন্য, ভাল মন্দ আনতে থলে হাতে বাজারে ছুটছেন। বৌমার পছন্দের ইলিশ ,কচি পাঁঠার মাংস, বড় কাতলা মাছের মাথাটা কিনে, মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি ও এক হাঁড়ি দই হাতে নিয়ে ফিরছেন। শাশুড়ি ঘেমে নেয়ে তা রেঁধে ফেলবেন।

বৌমা সেজেগুজে কাঁসার থালায় বাসমতী চালের ভাত আর থরে থরে বাটি সাজিয়ে খেতে বসেছে। বৌমার এক পাশে শাশুড়ি বসে বৌমার খাওয়া-দাওয়া তদারকি করছেন এবং সামনে বসে শ্বশুরমশাই তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করছেন। নারী-পুরুষের সমান অধিকারের প্রশ্নে জামাইষষ্ঠীর পরিপূরক বৌমাষষ্ঠীর প্রতিচ্ছবি এমনই হওয়া উচিত নয় কি?

মেয়েরাও আজ সংসার-অফিস দুই সামলাচ্ছেন, এখন শিক্ষিত পরিবারে পুত্র সন্তান বা কন্যা সন্তান হিসেবে কোনও ভেদাভেদ নেই। বৌমাষষ্ঠী নিয়ে নারীবাদীরা সরব। তবে আজও সমাজ অনেকাংশ পুরুষশাসিত। সেখানেই দু একটি বাড়ির বৌমা ষষ্ঠী পালনের ছবি ভাইরাল হয়, তারা ব্যতিক্রমের নজির হয়ে ওঠে। কিন্তু ব্যতিক্রম নয়, এটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠুক।

একটি-দুটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ হিসেবে নয়, নির্দিষ্টভাবে নিয়মিত শুরু হোক বৌমাষষ্ঠী। যাদের ছাড়া বাড়ি অচল, তাদের জন্যেও বরাদ্দ হোক একটি দিন। সূর্যকুমার মোদকরা ইতিমধ্যে বৌমাষষ্ঠী লেখা মিষ্টি বানাতে আরম্ভ করেছে। এইভাবেই বদল আসুক।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen