সুকান্ত, শুভেন্দুর থেকে অনেক কম সভায় দিলীপ, দলে কি ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ন’বছর পূর্তি পালনের জন্য দেশ জুড়ে প্রচার কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মহা জনসম্পর্ক অভিযান’। মূল লক্ষ্য আগামী লোকসভা নির্বাচনের দলের প্রচার শুরু করে দেওয়া। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে সেই মতো এই রাজ্যেও কর্মসূচি শুরু হয়েছে বিজেপির। তার উপর আর কদিন পরই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ফলে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে রাজ্য বিজেপি।
জানা গিয়েছে, রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক ১৩০৯ মণ্ডলের মধ্যে এক হাজারটিতে একটি করে সভা করা হবে। রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় তিন বা চারটি করে মণ্ডল রয়েছে বিজেপির। দল ঠিক করেছে, প্রথম পর্বে বিধানসভা পিছু একটি করে সভা হবে জুন মাসে। সেই মতোই সুকান্ত, শুভেন্দু এবং দিলীপের মধ্যে সভার সংখ্যা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আর এখানেই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। রাজ্য বিজেপি’র হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যের প্রধান তিন নেতার সভার সংখ্যার মধ্যে বিস্তর ফারাক।
বিজেপি’র তালিকা অনুযায়ী ৬৯টি সভা করবেন বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী করবেন মোট ২৩টি সভা। আবার চাকদহ, কাকদ্বীপ ও বলাগড়ের সভায় শুভেন্দুর সঙ্গে থাকবেন সুকান্তও।
তবে সবচাইতে অবাক করা বিষয় হল, বিজেপি’র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে রাখা হয়েছে মাত্র ১০টি বিধানসভা এলাকায় প্রচারের জন্য! আগে জানা গিয়েছিল এই কর্মসূচিতে সুকান্ত, শুভেন্দু এবং দিলীপকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে। রাজ্য দলের প্রধান তিন মুখ ১০০টি করে সভা করবেন। বাকি ৭০০টি সভা করবেন বাকি রাজ্য নেতা, সাংসদ, বিধায়করা। সুকান্ত, শুভেন্দু, দিলীপ মোট ৯৯টি সভা করবেন প্রথম পর্বে। বাকি ১৯৫টি সভার জন্য এই রাজ্যের সাংসদ হিসাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার, শান্তনু ঠাকুর যেমন রয়েছেন, তেমনই বাকি পরিচিত সাংসদ, বিধায়কেরাও রয়েছেন। তালিকায় জায়গা পেয়েছেন রাজ্যসভায় দলের প্রাক্তন সাংসদ তথা অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষেরাও।
আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে দিলীপ ঘোষকে এত কমসংখ্যক সভার জন্য রাখা হচ্ছে কেন? এক সময় এই দিলীপ ঘোষ বিজেপি’র মুখ ছিলেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকেই প্রচারের মুখ করা হয়েছিল। তাহলে কী আস্তে রাজ্য বিজেপিতে দিলীপের গুরুত্ব কমছে। এমনিতেই বিভিন্ন সময় দিলীপের বক্তব্য বিড়ম্বনায় ফেলেছে দলকে। যা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিরক্তিও প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই দিলীপকে এই প্রচার কর্মসূচিতে সতর্কভাবে ব্যবহার করতে চাইছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। আর মেদিনীপুরের সাংসদের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারের ‘সুসম্পর্কে’র কথা বহুল চর্চিত।
যদিও রাজ্য বিজেপি’র সাফাই, ‘দিলীপদা দীর্ঘ সময় রাজ্য সভাপতি থেকেছেন। গোটা রাজ্য ঘুরেছেন। এখন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হওয়ার পরেও নিয়মিত তাঁর সফর চলে। এই পর্বেও দিলীপদাকে যতটা সম্ভব বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি অনেক সাংগঠনিক বৈঠক নিচ্ছেন বিভিন্ন মণ্ডলে গিয়ে।’
তবে রাজ্য বিজেপি’র তরফে বিষয়টি নিয়ে যতই সাফাই দেওয়া হোক না কেন, ‘মহা জনসম্পর্ক অভিযান’-এর সূচি নিয়ে কিন্তু দলেরই অন্দরমহলে নানা প্রশ্ন উঠছে। বলাবাহুল্য, ওই প্রশ্নগুলি দলের একতার কথা বলে না, বরং গোষ্ঠী কোন্দলের কথাই বলে।