জানেন কি, বাংলার রাজবংশী সমাজে লোকায়ত বিশ্বাস ও কৃষি-প্রবাদের কথা?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: রাজবংশীদের জীবনচর্যা, সমাজ ও সংস্কৃতিতে বারে বারে উঠে এসেছে কৃষি অর্থনীতি। কৃষিতে উর্বরতা এবং মঙ্গল কামনায় সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন লৌকিক দেব-দেবীর পূজা-পার্বণ ও ব্রত।
ব্যবহারিক জীবন নিয়ে রাজবংশী সমাজের কৃষি সংক্রান্ত প্রবাদ-প্রবচন
জানা গেছে, রাজবংশী সমাজে শিবকে কৃষি দেবতা রুপে পুজো করা হয়। তাই গোরক্ষনাথের গানে আছে শিবের কথা।
যেমন-
‘এক চাষো করে, ভুঁই খান
দুইয়ো চাষো মই
তাওনা কেনে উঠির না চায়
কেন্না দুব্বা বই।
একই ভাবে প্রবাদে আছে শিবের দই চুড়া খোয়া। উর্বরতার ক্ষেত্রে ভূমি ও নারী সমার্থক যা বিশ্বজনীন ফার্টিলিটি কাল্ট’-এরই পরম্পরা।
তাই রাজবংশী প্রবাদে বলা হয়েছে-
‘আষাঢ়ের মাটি
চাষার ঘরের বেটি।’
অথবা,
‘ভাল মানষির বেটি
কাতি মাসের মাটি।’
একজন কৃষকের কাছে ধান ও গাই বা গাভী সম-মূল্যবান। প্রবাদে উল্লেখ আছে-
“ধান সে ধন আর ধন গাই
কিছু ধন সোনা উপা আর তামানে ছাই।”
‘আছে গরু না বয় হাল
তার দুক্কো চিরোৎকাল।’
“ওয়া গারো চাপি
ধান নেও মাপি।”
“ইয়ার ঠ্যাস্যা উয়া ঠেসি।
তাতে যায় কাম কিসি।”
‘কলা গাড়িয়া না কাটে পাত।
তাতে কাপড় তাতে ভাত।’
‘ভাদর মাসিয়া ধান।
শ্বশুর বাড়ির দান।’
রাজবংশী সমাজে নারী ও কৃষিজ উৎপাদনের সম্পর্ক লোকায়ত বিশ্বাস
- ১। মেয়োরা বীজ বপন করলে উৎপাদন বেশী হবে ।
- ২। বন্ধ্যা নারী ক্ষেত্রের পক্ষে অনিষ্টকর কিন্তু বহু সন্তানবর্তী ক্ষেতের পক্ষে শুভদায়িনী।
- ৩। নববধূর অঞ্চলে শস্যের বীজ বেঁধে দেওয়া, বৃক্ষরোপন, ক্রোড়ে শিশুসন্তান বা বৃক্ষের ফল স্থাপন, নববধূকে ধানদুর্বার আশীর্বাদ, পূজা পার্বণে হিন্দু সধবা নারীর সিঁদুর ব্যবহার করার মধ্যে এই জাতীয় বিশ্বাস রয়েছে।
- ৪। গর্ভবর্তী নারী কোনবৃক্ষের ফল ভক্ষণ করলে বৃক্ষটির ফল আগামী মরসুমে বেশী হবে ।
- ৫। জোড়া ফল আহার করলে নারী যমজ সন্তানের জন্ম নেবে ইত্যাদি।
- ৬। ভাত নিয়ে একজন খাওয়ার পরে বাড়তি ভাত রেখে দিলে সারা বছর গৃহে ধান উদ্বৃত্ত থাকবে।