আয়ুষ্মান প্রকল্পে পরিযায়ী! সংঘাতের পথে কেন্দ্র-রাজ্য
পরিযায়ীদের নিয়ে আবার কেন্দ্র-বঙ্গ সংঘাতের আশঙ্কা জোরদার হয়েছে। এ বার সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প।
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে চরমে ওঠা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক তরজা শেষ হয়নি এখনও। বরং আয়ুষ্মান প্রকল্পে ওই শ্রমিকদের যুক্ত করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের পরে সেই তরজা আরও বাড়তে বলে পর্যবেক্ষক শিবিরের ধারণা। কারণ, কেন্দ্রের আয়ুষ্মান প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যুক্ত হয়নি। তা নিয়ে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকেরা আয়ুষ্মান প্রকল্পের সুবিধা না-পেলে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝাঁঝ আরও বাড়তে পারে। সে-দিক থেকে রাজ্য প্রশাসনের সামনে কার্যত উভয়সঙ্কট।
রাজ্য সরকারের বক্তব্য, ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্প কোনও ভাবেই বাংলার স্বাস্থ্যসাথীর সমকক্ষ নয় এবং রাজ্যকে এড়িয়ে তা রূপায়ণও করতে পারবে না কেন্দ্র। পর্যবেক্ষক শিবিরের ধারণা, এ বার পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের চাপান-উতোর গড়াতে পারে আগামী বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত।
ন্যাশনাল হেল্থ অথরিটি (এনএইচএ) সম্প্রতি জানিয়েছেন, কোভিড পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের আয়ুষ্মান স্বাস্থ্য বিমার সুযোগ-সুবিধা দিতে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। উপভোক্তাদের চিহ্নিত করা এবং তাঁদের ই-কার্ড দিতে রাজ্যগুলির সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেছেন তাঁরা। অনলাইনে ই-কার্ডের মাধ্যমে দেশের যে-কোনও জায়গায় স্বাস্থ্য পরিষেবার সুবিধা নেওয়া যাবে।
দেশের ৩৫টি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, তেলঙ্গানা ও দিল্লি এখনও আয়ুষ্মান প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প আছে। আয়ুষ্মান প্রকল্প সম্পর্কে বাংলার মনোভাব বরাবরই নেতিবাচক। কারণ, রাজ্য সরকার মনে করে, কেন্দ্রের আয়ুষ্মানের অনেক আগে স্বাস্থ্যসাথী চালু করা হয়েছে। তাতে পরিবারের সংখ্যার কোনও সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রের আয়ুষ্মান প্রকল্পের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। রাজ্য মনে করে, স্বাস্থ্যসাথীর ‘নকল’ করেই নিজেদের ওই স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প চালু করেছে কেন্দ্র। ফলে আধিকারিকদের অনেকেরই ধারণা, আয়ুষ্মান প্রকল্পের সঙ্গে পরিযায়ীদের যুক্ত করার কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় রাজ্যের সায় না-দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। “কেন্দ্রের প্রকল্প (আয়ুষ্মান) ক্যাশলেস নয়, ওটা লেস ক্যাশ,” বলেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকেরা রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আছেন কি? চন্দ্রিমা বলেন, “দেড় কোটি পরিবারের অন্তত সাড়ে সাত কোটি মানুষ এই সুবিধা পাচ্ছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের ধরন স্বনির্ভর অস্থায়ী শ্রমের মতোই। ফলে তাঁদের স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আসতে কোনও বাধাই নেই। তাই এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করেও লাভ নেই। কাদের যুক্ত করতে হবে, মুখ্যমন্ত্রী তা ভাল করেই জানেন।” স্বাস্থ্য পুরোপুরি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। তাই কেন্দ্র সেখানে নাক গলাতে পারবে না বলে মনে করেন তিনি।