মাষান: উত্তরবঙ্গের এক ভয়ংকর লৌকিক দেবতা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মাষান একটি ভয়ংকর দেবতা। মাষান পুজোর উৎস হল প্রচলিত লোক বিশ্বাস। এই দেবতাকে ঘিরে মানুষের মনে নানান ভয় কাজ করে। কথিত আছে, এই দেবতাকে অমান্য করলে নাকি বিপদ অনিবার্য। এই পুজো করলে নাকি সব রকম অমঙ্গল থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
উত্তরবঙ্গে রাজবংশীদের মধ্যে এই মাষান দেবতার পুজোর প্রচলন আছে। এই দেবতাকে ঘিরে রয়েছে নানান গল্পকথা। কাউকে মাষান ‘ভর’ করলে মন্ত্রগান শোনাতে হয় ঠিক করবার জন্য। এই মন্ত্রগান হল লোকনাট্যের আঙ্গিকের গান, যাতে রোগীকে নাকি দিব্যি সুস্থ হয়ে যান। এক জেলার মাষান যদি গান শুনে তুষ্ট হন, তাহলে অন্য জেলার মাষান তুষ্ট মুখোশ পুজোয়।
লোকবিশ্বাস অনুযায়ী প্রায় ২৪ ধরণের মাষান ঠাকুর দেখতে পাওয়া যায়।
অঞ্চলভেদে মাসান বাবার কয়েকটি রূপ
১. পিছলা মাষান : মূলত জলে থাকেন
২. ঘটিয়া মাষান : নদীর ঘাটে অবস্থান করেন ৩. কহোতা মাষান
৪.কালা মাষান : মূলত শ্মশানে থাকেন
৫.নাঙ্গা মাষান : নগ্ন ভাবে অবস্থান করেন।
এছাড়াও মন্ত্র পড়ে যে সমস্ত মাষানের পুজো হয় সেগুলি হল খাটিয়া মাষান, ঘড়া মাষান, ছুচিয়া মাষান, বিষুয়া মাষান, জলুকা মাষান, কনকনিয়া মাষান, হাগুরা মাষান, টুপা মাষান, কালিকা মাষান, পৈরী মাষান।
লোকমুখে জানা গিয়েছে এই দেবতা কখনও কখনও ঘোড়ায় চড়ে আসেন, আবার কখনও মাছে।
এই পুজোর নৈবেদ্যেতে থাকে দই-চিঁড়ে, চালভাজা। আবার কখনও পোড়া চ্যাং মাছেও পেয়েও খুশি হন এই দেবতা।
জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিংয়ে মাষানের মূর্তি তৈরি হয় শোলা দিয়ে, তুফানগঞ্জ, কোচবিহারে মাটির দিয়ে। আবার নেপালে পুজো হয় মাটির ঢিবি, বা থাপানাতে। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং, দুই দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ার ছাড়াও পুজো পেয়ে থাকেন নেপালের ঝাঁপা, ও বাংলাদেশের রংপুরে, অসম এবং মেঘালয়ের কিছু জেলাতেও। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে প্রতিবছর সম্পূর্ণ বৈশাখ মাস ব্যাপী মাষান বাবার পুজোঅর্চনা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয় ।