আজ থেকে শুরু হচ্ছে শ্রীচৈতন্যদেবের স্মৃতি বিজড়িত মালদহের রামকেলির মেলা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আজ থেকে আরম্ভ হচ্ছে রামকেলির মেলা ও মহোৎসব। চৈতন্যের স্মৃতিধন্য এই মেলা হয়ে ওঠে মহামিলন কেন্দ্র। দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন আসেন এখানে। কথিত আছে প্রায় ৫০৯ বছর আগে বৃন্দাবন যাওয়ার পথে মালদহে এসেছিলেন মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেব। চৈতন্যদেব ও রূপ-সনাতন গোস্বামীর মিলনকে কেন্দ্র করে তিনদিনের রামকেলি উৎসবের সূচনা হয় জৈষ্ঠ সংক্রান্তিতে। এলাকাজুড়ে প্রচুর আখড়া তৈরি হয়, দূর-দূরান্ত থেকে আসা বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীরা সেখানে থাকেন। কীর্তনের আসর বসে।
এই মেলা বৈষ্ণবদের কাছে প্রায় জাতীয় উৎসব। রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষ যোগ দেন এই রামকেলির মেলায়। জৈষ্ঠ্য মাসের সংক্রান্তি থেকে পরবর্তী সাত দিন ধরে চলে রামকেলির মেলা। কয়েক লক্ষ মানুষের সমাবেশ হয় এই মেলায়। কোনও এক সময় এই মেলায় শুধুমাত্র আঙুল দেখে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতেন বৈষ্ণব পুরুষরা। সেই কারণে এই মেলার আরেক নাম গুপ্ত বৃন্দাবন।
এক সময় বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। গৌড়ের বাদশা হুসেন শাহর আমলে, তাঁর মন্ত্রিসভায় ছিলেন মহাবৈষ্ণব বলে পরিচিত রূপ ও সনাতন গোস্বামী। এঁরা ছিলেন সাকর মল্লিক ও প্রধান মুনশি দবীর খাস, তাঁরা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হন। পরবর্তীকালে দু’জন রূপ গোস্বামী ও সনাতন গোস্বামী নামে খ্যাতি লাভ করেন। তাঁরা ১৫০৯ সালে রামকেলিতে মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তৈরি করেছিলেন আটটি কুণ্ড, আদপে তাঁরা রামকেলিকে কার্যত বৃন্দাবনের রূপ দিতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে রামকেলি গুপ্ত বৃন্দাবন বলেও পরিচিতি লাভ করে। এই দুই মহাবৈষ্ণবের সঙ্গে দেখা করতে ১৫১৫ সালের ১৫ জুন জৈষ্ঠ্য সংক্রান্তিতে রামকেলিতে এসেছিলেন মহাপ্রভূ চৈতন্যদেব। তাঁদের এই মিলন হয়েছিল মদনমোহন মন্দির সংলগ্ন কেলিকদম্ব ও তমাল গাছের তলে। মহাপ্রভূ ও রূপ-সনাতনের এই মিলন দিনকে ঘিরেই রামকেলিতে উৎসব বা মেলা হয়ে আসছে।
রামকেলির মেলা মালদহের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন মেলা। বর্তমানে একই সঙ্গে মদনমোহনের বার্ষিক উৎসবও পালিত হয়। পঞ্চরত্ন মন্দিরে মদনমোহন ও রাধারানির পুজো হয়। পুজোর সঙ্গে সঙ্গে চব্বিশ প্রহরব্যাপী কীর্তনের আসর বসে। এ মেলা আদ্যন্ত গ্রামীণ মেলা।