ঐক্যবদ্ধ হয়ে BJP-র বিরুদ্ধে লড়াই – বৈঠকের পর বিরোধীদের গলায় একটাই সুর
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শুক্রবার মোদী বিরোধী তাবৎ শক্তির উপস্থিতিতে পাটনায় হল মহা বৈঠক। ১৭টি বিরোধী দলের এই বৈঠকে প্রাথমিকভাবে বিজেপি’র বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াইয়ের সিদ্ধান্তে একমত সকলে।
পাটনায় বিরোধীদের প্রথম বৈঠকেই পরবর্তী বৈঠকের দিনক্ষণ স্থির হয়ে গিয়েছে। ১০ কিংবা ১২ জুলাই সিমলায় হবে বিরোধী দলগুলির পরবর্তী বৈঠক। নীতীশ কুমার জানান, পরের বৈঠকের আহ্বায়ক কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে জানান, সিমলায় ১২-১২ জুলাই বৈঠক হতে পারে। সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে দিন চূড়ান্ত করা হবে।
তবে আগামী দিনে বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চার সুর বোধ হয় এদিন বেঁধে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পরামর্শেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার পাটনায় শুক্রবার বিরোধী দলগুলিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বেলা ১১ টা থেকে বিকাল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত বৈঠক চলে।
বৈঠক শেষে নেতাদের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আজকের বৈঠকে চারটি বিষয়ে আমরা সহমত হয়েছি। তা হল, আমরা সবাই একত্রে আছি। দুই, লোকসভা ভোট আমরা জোট বেঁধে লড়াই করব। তিন, কেন্দ্রের মোদী সরকারের কালা কানুন প্রয়োগ, এবং অবিজেপি বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির উপর দমনপীড়নের ঘটনায় আমরা সবাই এক জোট হয়ে লড়াই কবব। চার,পরের বৈঠক আগামী মাসে সিমলায় হবে।
এদিন বৈঠকে মমতা নেতাদের উদ্দেশে বলেন, সবাইকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছাড়তে হবে। সেই সুরেই সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গান্ধী নমনীয়তার কথা বলেছেন। কংগ্রেস নেতা বলেন, আমরা এক সঙ্গে লড়াই করব, এই সিদ্ধান্ত হয়েই গেছে। এবার রাজ্যে রাজ্যে খোলা মনে, নমনীয় অবস্থান নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত যারা: নীতীশ কুমার (জেডিইউ), লালুপ্রসাদ যাদব (আরজেডি), মল্লিকার্জুন খাড়গে (কংগ্রেস), রাহুল গান্ধী (কংগ্রেস), কে সি বেণুগোপাল (কংগ্রেস), মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (তৃণমূল),অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (তৃণমূল), ফিরহাদ হাকিম (তৃণমূল), ডেরেক ও’ব্রায়েন (তৃণমূল), অরবিন্দ কেজরিওয়াল (আপ), ভগবন্ত মান (আপ), ওমর আবদুল্লাহ (ন্যাশনাল কনফারেন্স), মেহেবুবা মুফতি (পিডিপি), শরদ পওয়ার (এনসিপি), উদ্ধব ঠাকরে (শিব সেনা উদ্ধব গোষ্ঠী), এমকে স্ট্যালিন (ডিএমকে), অখিলেশ যাদব (সমাজবাদী পার্টি), সীতারাম ইয়েচুরি (সিপিএম), ডি রাজা (সিপিআই), দীপঙ্কর ভট্টাচার্য (সিপিআইএম লিবারেশন), হেমন্ত সোরেন (ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা)। এছাড়াও বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পাটনার বৈঠকে কে কী বললেন:
- নীতীশ কুমার: মল্লিকার্জুন খাড়গে শীঘ্রই আরেকটি বিরোধী বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন।
- মল্লিকার্জুন খাড়গে: একজোট হয়ে ২০২৪-শে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত। আমরা ১০-১২ জুলাইয়ের মধ্যে হিমাচলে বিরোধীদের পরবর্তী বৈঠক হবে।
- রাহুল গান্ধী: ভারতের মূল ভিত্তি এখন আক্রমণের মুখে পড়েছে। মতাদৰ্শের লড়াই, দেশকে বাঁচাতে বিরোধী দলগুলি নমনীয়তার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবে।
- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: পাটনায় যা শুরু হয় তা গণ আন্দোলনে পরিণত হয়। আমাদের বিরোধী দল বলবেন না। আমরাও দেশের নাগরিক। কালা আইন, তানাশাহীর বিরুদ্ধে আমরা একসাথে লড়বো। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতলে দেশে আর কোনও নির্বাচন হবে না।
- উদ্ধব ঠাকরে: আমি নিজেকে বিরোধী দলের মনে করি না। যাইহোক, যারা দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আক্রমণ করবে এবং স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে আমরা সবাই তার বিরোধিতা করব।
- ডি রাজা: হারিয়ে যাওয়ার আগে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে এবং পুনরুদ্ধার করার জন্য, আমরা সবাই সহমত হয়েছি এবং আমরা একই মত পোষণ করি- আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে পরাজিত করতে হবে।
- মেহবুবা মুফতি: গান্ধীর দেশকে গডসের দেশ হতে দেব না।
- ওমর আব্দুল্লা: জম্মু ও কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সমমনভাবাপন্ন সব দল আজকের বৈঠকে অংশ নেয়। এটা ক্ষমতার লড়াই নয়, মূল্যবোধ ও আদর্শের লড়াই। হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের কথা বলছেন, শুনে ভালো লাগলো। তবে জম্মু ও কাশ্মীরে গণতন্ত্র না থাকার কারণ কী?
- লালু প্রসাদ যাদব: ভগবান হনুমান কর্ণাটকে তার গদা দিয়ে বিজেপিকে আঘাত করেছিলেন এবং রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস দলকে জয়ী করেছিলেন। ভগবান হনুমান বিরোধীদের সাথে ছিলেন, এবং এটা নিশ্চিত যে বিজেপি আসন্ন নির্বাচনে ব্যাপক হারের মুখোমুখি হবে।