এসি’র সাময়িক ঠান্ডা পৃথিবীকে বিপদের মুখে ফেলছে, বাড়ছে গরমের তীব্রতা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি ছাড়া জীবন অচল। এটা লাগবেই। বরং দিন দিন আরও বেশি দরকার হবে। আমাদের মতো গরমের দেশে তো বটেই, এখন শীতের দেশেও গরম বাড়ছে। আর সেই সঙ্গে বাড়ছে এসির প্রয়োজন।
এসি কাজের কক্ষে গরম কমায়, উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। এসি চালাতে বিদ্যুৎ লাগে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে লাগে জ্বালানি। এটা পুড়ে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড ছড়ায়। এসির ভেতরে ব্যবহৃত কুলিং এজেন্টও (শীতলীকরণ তরল) বাতাসে কার্বন ছড়ায়। ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন বাড়ে।
এ জন্যই পরিবেশবিদেরা অন্য অনেক কিছুর পাশাপাশি এসিকে বিশ্ব উষ্ণায়নের একটি বড় কারণ বলে চিহ্নিত করেন। তাঁরা এসির ঘোর বিরোধী। কিন্তু কঠিন সত্যটা হলো ১৯০২ সালে এসি আবিষ্কারের পর থেকে প্রায় ১০০ বছরে বিশ্বে যত এসি বসানো হয়েছে, তার সমান সংখ্যার এসি আগামী ১০ বছরে যোগ হবে। তার মানে আমরা একটা গোলকধাঁধায় পড়ে গেছি। যত দিন যাবে, গরম তত বাড়বে, তত বেশি এসি লাগবে। তখন বাতাসে আরও বেশি হারে কার্বন ছড়াবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আরও বাড়বে। আরও বেশি এসি বাজারে আসতে থাকবে!
নগরায়নের অন্যান্য উপাদানের মধ্যে ছোট গাড়ি এবং এয়ারকন্ডিশনারের ব্যবহার বাড়তে থাকাই তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির বড় কারণ, তা একাধিক সমীক্ষার কথা উল্লেখ করেছে পরিবেশ বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ডাউন টু আর্থ’।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের তথ্যই জানিয়েছে এ বছরের ফেব্রুয়ারি গত একশো বছরের উষ্ণতম ছিল। ১৯০১ সালে তাপমাত্রা নথিভুক্তি শুরু হওয়ার পর থেকে ফেব্রুয়ারির গড় উষ্ণতা এত ছিল না।
দিল্লির পরিবেশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ একটি সমীক্ষায় জানিয়েছে যে বড় শহরের গড় তাপমাত্রা অন্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি। এর আগে বিভিন্ন সমীক্ষায় বহুতলের কারণে উষ্ণতা বৃদ্ধি হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে এয়ারকন্ডিশনার রয়েছে এমন বাড়ি থেকে ১২ হাজার ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট তাপ নির্গত করে পরিবেশে। সমীক্ষক ওয়েবসাইট ‘স্ট্যাটিস্টা’-র হিসেব অনুযায়ী ভারতে কেবল ২০২৩ সালে ৯৭ লক্ষ এসি বিক্রি হবে।
সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারকে বড় শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলা হয়েছে নিবন্ধে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি মন্ত্রকের তথ্যের উল্লেখ করা হয়েছে। মার্কিন শক্তি মন্ত্রকের সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, গাড়ির জ্বালানির ৬৮ থেকে ৭২ শতাংশ ক্ষয় হয় রেডিয়েটর এবং এক্সহস্ট-এ। এর বাইরে নির্গত ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড আছে।
সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকায় (আগস্ট ২৫, ২০১৮) এ বিষয়ে বিস্তৃত লেখা বেরিয়েছে। সেখানে অন্য ধরনের দূষণের সঙ্গে তুলনা করে দেখানো হয়েছে এসির দূষণ কত ভয়াবহ। যেমন, বিশ্বের অর্ধেক মানুষ যদি মাংস খাওয়া বাদ দেয় তাহলে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টন কার্বন বায়ুমণ্ডলে কম ছড়াবে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের উজাড় করা বনভূমির দুই-তৃতীয়াংশ পুনরুদ্ধার করতে পারলে ৬ হাজার ১০০ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কমবে। বিশ্বব্যাপী সাইকেলে চলাচল এক-তৃতীয়াংশ বাড়াতে পারলে ২৩০ কোটি টন কার্বন কমবে। আর সে তুলনায় শুধু এসিতেই কমানো যেতে পারে ১৮ হাজার কোটি টন কার্বন নিঃসরণ!
তাহলে বুঝুন, এসির দূষণ কমাতে না পারলে কি ভয়ংকর পরিণতি হবে।