অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তোলপাড় দেশ, খসড়া তৈরি করছে মুসলিম ল বোর্ড
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: বিজেপির ঘোষিত লক্ষ্য—‘এক দেশ, এক বিধান (সংবিধান), এক নিশান (পতাকা)’। এই লক্ষ্য তাদের পূরণ হয়েছে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে। ওই অনুচ্ছেদ জম্মু-কাশ্মীরকে আলাদা পতাকা ও সংবিধান দিয়েছিল। এখন বিজেপির লক্ষ্য—‘এক রাষ্ট্র, এক আইন’ প্রতিষ্ঠা। অঘোষিত লক্ষ্য—‘এক রাষ্ট্র, এক দল, এক নেতা’ গঠন। সে জন্য চেষ্টার ত্রুটি নেই।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নে সরকার যে কতটা তৎপর, খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে বিজেপি কর্যকর্তাদের এক অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিবারের প্রত্যেকের জন্য আলাদা নিয়ম থাকলে যেমন সংসার চালানো যায় না, তেমনই দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা আলাদা আইন থাকলে দেশ চালানো কঠিন হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর থেকেই তোলপাড় গোটা দেশ। মোদীর এই বক্তব্যের পরেই অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড জরুরী ভিত্তিতে মিটিংয়ে বসে পড়ে। গভীর রাতে মিটিং শুরু করে দেন তারা। দীর্ঘ আলোচনা চলে তাঁদের মধ্যে। পরে তাঁরা জানিয়েছেন, একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একটি খসড়া তৈরি করা হবে। সেখানে শারিয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা থাকবে। কেন এটা প্রয়োজন সেটা বলা হবে। ল কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে এই খসড়াটা জমা দেওয়ার জন্য সময় চাওয়া হবে।
বিজেপি নীতিগতভাবে সব সময়ই যে তিনটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে, তার অন্যতম এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। অন্য দুটি বিষয় ইতিমধ্যেই তারা আয়ত্ত করে ফেলেছে। অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। জম্মু–কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা ৩৭০ অনুচ্ছেদও তারা খারিজ করে দিয়েছে। বাকি রয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। সম্প্রতি আইন কমিশনও এ বিষয়ে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা ও নাগরিক সমাজের মতামত জানতে চেয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে তা কমিশনকে জানাতে হবে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব বোঝাচ্ছে, দেরি না করে সরকার এই অধরা কাজও সেরে ফেলতে চায়।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন,মধ্যপ্রদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রসঙ্গ তোলাও তাৎপর্যপূর্ণ। এই রাজ্যে চলতি বছরের শেষে ভোট। সেখানে শাসক বিজেপির হালও বেশ নড়বড়ে। মনে করা হচ্ছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রসঙ্গ তুলে মোদী সেখানে হিন্দুদের জোটবদ্ধ করতে চাইছেন।
অন্যদিকে আপের সঙ্গে বিজেপির নীতিগত ফারাক রয়েছে। রাজনৈতিক শত্রুতাও রয়েছে। তবে তার মধ্যেই এবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ইস্যুতে বিজেপির পাশে দাঁড়াচ্ছে আপ। যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।