রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

সৌরভ নাকি মিঠুন, কাকে বাংলা থেকে রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে বিজেপি, জোর জল্পনা

June 29, 2023 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পঞ্চায়েতের ভোটের প্রচার পর্বের মধ্যেই ফের ভোটের দামামা বেজেছে রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গে সাতটি রাজ্যসভা আসনে ভোট হবে আগামী ২৪ জুলাই। ভোটগণনা শুরু হবে ওই দিন সন্ধেতেই। জানিছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্য থেকে মনোনীত ছ’জন রাজ্যসভা সাংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে ওই আসনগুলিতে নির্বাচন হচ্ছে। অন্য দিকে, তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত লুইজিনহো ফেলেইরো মেয়াদ শেষের আগেই ইস্তফা দেওয়ায় সপ্তম আসনটিতে উপনির্বাচন হচ্ছে।

ছ’টি আসনের মধ্যে একটি জয়ের জন্য সরাসরি ৪২ জন বিধায়কের সমর্থনের প্রয়োজন। ফলে পরিষদীয় পাটিগণিতের নিয়মে তৃণমূল পাঁচটি এবং বিজেপি একটিতে জিততে পারে। বিধানসভায় শক্তির নিরিখে বাংলায় রাজ্যসভার ছয়টি আসনের নির্বাচনে একটি আসনে বিজেপির জয় নিশ্চিত। আর এই একটি আসনে কাকে প্রার্থী করা হবে তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে বঙ্গ বিজেপিতে।

রাজ্য থেকে কে প্রার্থী হবেন তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা’র নেতৃত্বাধীন বিজেপি’র পার্লামেন্টারি বোর্ড। কিন্তু কে প্রার্থী হবেন? পঞ্চায়েত ভোটের আগে এখনই তা নিয়ে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব প্রকাশ্যে কিছু জানাচ্ছে না। তবে কোন পদ্ধতিতে প্রার্থী বাছাই হতে পারে, তার ইঙ্গিত মিলেছে বিজেপির নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তায়।

গেরুয়া শিবিরের অন্দরের খবর, তিনটি ফর্মুলায় বাছা হতে পারে প্রার্থী। রাজ্যে ‘নতুন নেতা’ ঠিক করা। এমন কাউকে বাছা হতে পারে, যিনি আগামী দিনে রাজ্য বিজেপির হাল ধরবেন। সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতি থাকতে থাকতেই নির্বাচিত রাজ্যসভা সাংসদের সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ পর্ব চলবে।

দ্বিতীয়, বিজেপি এমন কাউকে খুঁজতে পারে, যিনি আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভোটারদের কাছে ‘চুম্বক’ হিসাবে কাজ করবেন। তাঁকে রাজনীতির লোক হতেই হবে এমন কোনও কথা নেই। অন্য ক্ষেত্রের কোনও বিশিষ্ট হতে পারেন। তবে সর্বস্তরের মানুষের কাছে তাঁর ভাল ভাবমূর্তি থাকা চাই।

তৃতীয় ফর্মুলাও একটি রয়েছে। তবে তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সে ক্ষেত্রে দলের কোনও পুরনো নেতাকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে পুরস্কার দেওয়া।

আবার গেরুয়া শিবিরের একাংশের বক্তব্য, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এক বা একাধিক নামের প্রস্তাব পাঠাবেন। রাজ্যসভার নির্বাচনের ফলাফল যেহেতু বিধানসভায় বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে ঠিক হয়–তাই বিরোধী দলনেতার অভিমতের বাড়তি গুরুত্ব থাকে। তাই শুভেন্দুর অভিমত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন বলেই রাজ্য বিজেপির একাংশ মনে করছেন।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও রাজ্য নেতৃত্বের তরফে নামের সুপারিশ করতে পারেন। সেখানে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর অভিমতের গুরুত্ব রয়েছে। যদিও বঙ্গ বিজেপির এক পোড়খাওয়া নেতার পর্যবেক্ষণ, ‘রাজ্যস্তরে মতপার্থক্য থাকলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনও সুপারিশ গ্রহণ না করে তৃতীয় কাউকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করতে পারেন।’

অতীতে পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় রাজনীতি না করলেও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির একাধিক তাত্ত্বিক নেতা বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন। যাঁদের অনেকেই জয়ী হতে পারেননি। প্রয়োজনে এঁদের মধ্যে থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কাউকে প্রার্থী করতে পারেন বলে গেরুয়া শিবিরের একাংশ মনে করছেন। যেমন স্বপন দাশগুপ্ত, অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। দু’জনেই বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেত্বত্বের ঘনিষ্ঠও। স্বপন দাশগুপ্তকে এর আগেও রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিল বিজেপি। অনির্বাণও দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যসভায় যাওয়ার জন্য। মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। যদিও শোনা যায়, বঙ্গ বিজেপি’র অন্দরে তাঁকে নিয়ে অনেক ক্ষোভ রয়েছে। আবার বিজেপি’র একটি সূত্রের মতে ‘মহা গুরু’ মিঠুন চক্রবর্তীকে বাংলা থেকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পারেন জেপি নাড্ডা অমিত শাহরা। তাতে সর্বস্তরের বাঙালির মন জয় করা যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। আবার অন্য একটি সূত্র বলছে, প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক তথা বাংলার ‘মহারাজ’কে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে লোকসভা নির্বাচনের আগে মাস্টার স্ট্রোক দিতে পারেন নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি’র সঙ্গে যে বিজেপি’র একটা সুসম্পর্ক রয়েছে তা অনেকেরই জানা। সম্প্রতি ইডেন যে বিশ্বকাপের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছ (যেখানে মোহালি, ইন্দোর, তিরুবন্তপুরমকে ব্রাত্য রাখা হয়েছে), তার পিছনে বিজেপি’র সঙ্গে সৌরভের সম্পর্কের রসায়ন কাজ করেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

আবার বিজেপি’র একাংশের মতে উত্তরবঙ্গ এই মুহূর্তে বিজেপি’র কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই উত্তরবঙ্গের কাউকে রাজ্য সভায় পিছিয়ে উত্তরবঙ্গের লোকসভা আসনগুলি নিশ্চিত করতে চাইবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

বিজেপির আদি দল ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রতিনিধি হিসাবে বাংলা থেকে ১৯৫২ সালে রাজ্যসভায় গিয়েছিলেন দেবপ্রসাদ ঘোষ। তবে ১৯৮০ সালে বিজেপি তৈরি হওয়ার পরে এই প্রথম বাংলার বিজেপি রাজ্যসভায় কোনও সদস্য পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছে। ফলে কে রাজ্যসভার আসনটি কার ভাগ্যে যাবে তা নিয়েই এখন জোর জল্পনা চলছে রাজ্য রাজনীতিতে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Rajya Sabha, #Sourav Ganguly, #bjp, #sukanta majumder, #Mithun chakraborty, #West Bengal

আরো দেখুন