বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

‘বাঘ বিধবা’ – কুসংস্কারের বলি নিরপরাধ মহিলারা 

July 29, 2020 | 2 min read

সুন্দরবনের ত্রাতা বনবিবি। বনবিবিকে পুজো দিয়ে বনজীবীরা বনে প্রবেশ করে। অনেক ক্ষেত্রেই শেষ রক্ষা হয় না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দুর্ভাগা গরীব মানুষগুলো বাঘের পেটে যায়। যখন এ খবর লোকালয়ে আসে, দোষী সাব্যস্ত হয় মৃতের স্ত্রী! সমাজ তাদের ‘বাঘ বিধবা’ বলে ডাকে।

কারও স্বামী মারা গেলে বউ বিধবা হয়। সুন্দরবনে আর এক কাঠি যোগ করে বলা হয় ‘বাঘ বিধবা’। স্ত্রীর তখন সমাজে ঠাঁই হয় না। ছোট ছোট সন্তান নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়ান বাঘ বিধবারা। পথের সঙ্গী হিসেবে তখন তারা কাউকে পান না। 

যেহেতু বাঘের আক্রমণে যারা মারা যান, তারা আসলে বনে যাওয়ায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেই যান, তাই তাদের স্ত্রী-সন্তান পরবর্তী সময়ে সরকারি সহযোগিতা থেকেও বঞ্চিত হন। সমাজচ্যুত হয়ে তারা অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করতে থাকেন।  

সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোর একটি বড় অংশ কুসংস্কারের আঁধারে ডুবে আছে। একসময় যেমন স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রীকে সহমরণে যেতে হত, এখনো বাঘ বিধবাদের অবস্থা দেখলে সে কথাই মনে পড়ে। সুন্দরবনে প্রবেশের আগে বনজীবীরা বনবিবির পূজা করে। এটা স্থানীয় সংস্কৃতি। কিন্তু বাকিটা শুধুই কুসংস্কার। যেমন কারও  স্বামী সুন্দরবনে গেলে সেই নারী অন্য পুরুষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না, চুল আঁচড়াতে পারেন না, এমনকি তিনি চুলে তেলও মাখতে পারেন না। 

স্বামী যত দিন বনে থাকবে তাদের খোলা চুলে চলাফেরা করা বারণ। এ সময় তারা সাবানও ব্যবহার করতে পারেন না; বা কোনো প্রসাধন। রান্নার জন্য লঙ্কাও পোড়াতে পারেন না তারা। সব ধরনের ভাজা-পোড়া তখন বন্ধ। এত কিছু স্ত্রীদের মেনে চলার পরও যখন কারো স্বামী বাঘের আক্রমণে মারা যান তখন সব দোষ গিয়ে পড়ে সেই স্ত্রীর ওপর। সমাজ ধরে নেয় স্ত্রীর ব্রত পালনে কোথাও হয়তো খুঁত ছিল।

ঠাঁই মেলে না শ্বশুরঘরেও। সমাজও তাদের ‘একঘরে’ করে দেয়। তারা যদি এ সময় যৌন নির্যাতনেরও শিকার হন তাহলেও দোষী তারাই। সুন্দরবন আজও যেন কুসংস্কারের অন্ধকারেই রয়ে গেছে। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bagh bidhoba, #tiger

আরো দেখুন