বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

উপমহাদেশে বাঘ লোপের ইতিহাস 

July 29, 2020 | 2 min read

বর্তমানে ভারতে আনুমানিক ২,৯৬৭ বাঘ রয়েছে। ১৯৪৭ সালে সেই সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০,০০০। শিকার এবং আবাসস্থল ধ্বংসই এই সংখ্যা ব্যপক হারে কমার মূল কারণ। ১৯৭২ সালে দেশজুড়ে যে বাঘ-শুমারি হয়, তাতে সারা ভারতে ১,৮২২৭ বাঘের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করেছিলেন। সেই মত, দেশজুড়ে ২৯ টি টাইগার রিজার্ভ তৈরি করা হয়।

একটা সময় ছিল যখন বাঘ পুরো ভারতে অবাধে বিচরণ করত। চেন্নাইয়ের আসল নাম ছিল পুলিয়ুর বা বাঘের শহর। ১৯৯৯ সালে বোম্বেতে বাঘ পাওয়া গিয়েছিল। তারা দিল্লি এবং আগ্রার  কাছে যমুনার পাশে বাস করত। আর সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার তো সর্বশ্রেষ্ঠ।

বাঘেদের বিলুপ্তি আরম্ভ হয়েছিল মুঘল আমলে। আকবর  ট্রফি শিকারের প্রচলন করেছিলেন। জাহাঙ্গীর শাসক হিসাবে তাঁর প্রথম ১২ বছরে ৮৬ টি বাঘ এবং সিংহকে হত্যা করেছিলেন। মুঘল রসুইয়ে রোজ ৩৬-৪০ টি বন্য প্রানীর মাংস রান্না হত।  

তারপর ব্রিটিশরা শুরু করে ভয়ঙ্কর বাঘ হত্যা লীলা। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের পর, ইংরেজরা এক অদ্ভুত নিয়ম চালু করলেন। বাঘ হত্যা করলে বিশেষ পুরস্কারের প্রচলন হল। ১৭৭০ সালে, পূর্ব ভারতে মারাত্মক দুর্ভিক্ষের ফলে কৃষিজমি জঙ্গলে পরিণত হয়েছিল। সেই সময় বন্যপ্রাণী নির্মূল করে, খাস জমি বৃদ্ধি করা হয়েছিল।

ব্রিটিশ আধিকারিকদের কাছে বাঘ শিকার ছিল বিনোদন। প্রতিটি সেনা সদস্য একটি গাছে লুকিয়ে শিকারে অংশ নিত। বাঘকে তার ডেরা থেকে বের করে এনে ‘বিটার’ এবং রাইফেল দিয়ে হত্যা করা হত। মুঘলদের ‘হাওদা’ শিকার কৌশল উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। 

এমন কোনও বড়লাট ছিলেন না যিনি বাঘ হত্যা করেননি। ১৯১১ সালে রাজ্যাভিষেকের পরে,  রাজা পঞ্চম জর্জ নেপালে ১০ দিনে ৩৯ টি বাঘকে হত্যা করেছিলেন। ১৮৭৫ থেকে ১৯২৫ সালের মধ্যে ৮০,০০০ বাঘ হত্যা করা হয়।

ভারতীয় রাজারা ব্রিটিশদেরও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কোটার মহারাজ একটি রোলস রয়েস ফ্যান্টমকে রাতের শিকারের জন্য স্পটলাইট দিয়ে সাজিয়েছিলেন, একটি মেশিন গান এবং বাঘের সাফারিদের জন্য একটি ল্যানটাকা কামান লাগিয়েছিলেন।

মধ্য ভারতের রেওয়া রাজাদের রাজ্যাভিষেকের পরে ১০৯ টি বাঘকে মরতে হয়েছিল। মাইসোরের প্রয়াত রাজা এবং তাঁর অতিথিরা ১৯৪৫ থেকে ১৯৬৭ সালের মধ্যে শতাধিক বাঘ গুলি করে মেরেছিলেন।  

বাঘ আমাদের জাতীয় প্রাণী। তবুও সরকার আজও তাদের সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট সক্ষম নয়। বাঘের বেঁচে থাকা আমাদের বাস্তুশাস্ত্র, জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যে ভীষন জরুরী।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#tiger extinction

আরো দেখুন