জটেশ্বরেই কেন এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল? জেনে নিন সেই রহস্যময় ইতিহাস
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা ব্লকের প্রান্তিক গ্রাম জটেশ্বর। এই গ্রামের জটেশ্বর বাজার এলাকায় অবস্থিত এই প্রাচীন শিবমন্দির। লোকবিশ্বাস, এই মন্দিরের শিব খুব জাগ্রত, আস্থার প্রতীক। জটেশ্বর শিব মন্দিরের ইতিহাস বহু পুরাতন।
ইতিহাস থেকে জানায়, জটেশ্বর শিব মন্দিরের বয়স আনুমানিক ১৯০ বছর। বর্তমানে মন্দিরের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। স্থানীয় প্রবীণদের কাছ থেকে জানা গেছে, আনুমানিক বাংলার ১২৩৩সনে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, এর পিছনে রয়েছে রহস্যময় কাহিনী।
জনশ্রুতি, জটেশ্বরের পূর্বদিকের গ্রামটির নাম হেদায়েতনগর। এই গ্রামে সেসময়ে ক্ষমতাশালী জোতদার ছিলেন বেদেং ধ্বনি। তাঁর অধস্তন কর্মরত লোকেরা বাস করতেন কাঠালবাড়ি গ্রামে। ১২৩৩ সনের কোনও এক শনিবার দুপুরে গ্রামবাসীরা লক্ষ্য করেন জঙ্গলের ভিতর একটি দুগ্ধবতী গাভীর বাঁট থেকে অনবরত দুধ নির্গত হচ্ছে, তা মাটি ভেদ করে একটি পাথর উঠে আছে, এবং সেই পাথরেই গাভীর দুধ অনবরত পড়ে চলেছে। এই দৃশ্য দেখে গ্রামবাসীরা ভয় পেয়ে যায়। এখানে ঠাকুরের আবির্ভাব হয়েছে, এই কথাটি চারিদিকে প্রচার হয়ে যায়। লোক মারফত বেদেং ধ্বনিও সেই কথা জানতে পারেন এবং অবাক হয়ে যান।
তারপর তিনি নির্দেশ দিলেন তাঁর বিশ্বস্থ হরেন রায় ও শচীন রায়কে সেই শিবলিঙ্গকে তাঁর বাড়িতে আনার জন্য। জোরদারের নির্দেশ মতো বাকে করে শিবলিঙ্গটি জোরদারের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। কিন্তু পথে ঘটল বিপত্তি। সেই সময়ে পাথরটির উচ্চতা ছিলো মাত্র,১০-১২ইঞ্চি,ও ১৪-১৫ইঞ্চি গোলাকৃতি। কাঁঠালবাড়ি থেকে জটেশ্বর হাটে পর্যন্ত তারা প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে গেলেন। তাই, শিবলিঙ্গের বাকটি মাটিতে রেখে খানিকক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর আর কোনওভাবেই সেটিকে তুলতে পারলেন না। শেষে জোতদার এসেও শিবলিঙ্গটিকে মাটি থেকে তুলতে ব্যর্থ হন। সেসময় জটেশ্বর কাঁচারিতে ম্যানেজার ছিলেন ওলিয়ার রহমান। তিনিও কাঁচারিতে দুই হাতি প্যায়ারি ও ফুলমতীকে এনেও শিবলিঙ্গের বাক তুলতে ব্যর্থ হন। বাধ্য হয়ে বাকটি সেখানেই রেখে দিয়ে সবাই যে যার মতো বাড়ি চলে গেলেন। পরের দিন সকালে জোতদার বেদেং ধ্বনি নিজে এসে কাশিয়া ও পাটকাঠি দিয়ে একচালার মতো একটি ঘর বানিয়ে দেন। দই চিড়া, ধূপকাটি, ধুপধুনা দিয়ে নিজে প্রথম পুজো দেন। দীর্ঘদিন এভাবেই চলতে থাকে পুজো অর্চনা। একদিন তিনিও পুজো দেওয়া বন্ধ করে দিলেন, যদিও মাঝে মধ্যে অনেক গ্রামবাসী এসে পুজো দিত। কিন্তু নিয়মিত পুজো দেওয়া হতো না, বেশ কিছুদিন এভাবে চলার পর হঠাত এক উলঙ্গ সাধুর আবির্ভাব ঘটলো, তাঁকে সবাই ‘ কাথেয়া বাবা’ বলে ডাকতো, উনি দীর্ঘদিন পুজো দিয়েছিলেন ও নিয়মিত নিয়ম নিষ্ঠা ভোরে পুজো করতেন।
একদিন তিনিও কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গেলেন। আবার ঠাকুর অবহেলায় পড়ে থাকতো, যে যার যখন ইচ্ছা হতো পুজো দিতো। এভাবে কিছুদিন চলার পর একদিন মিথিলা থেকে এক পুরোহিত এলেন, তিনি এসে স্থানীয়দের জানালেন তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন এখানে আসার জন্য। তিনি এসে দেখেন স্বপ্নে যা যা দেখেছেন সব একশো শতাংশ সত্যি। তিনি লোকেদের সাথে কথা বলে নিত্য পূজা ব্যবস্থা করেন, যা আজও নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে হয়ে চলেছে।
জানা যায় যে, বর্তমানে এই শিবলিঙ্গটির আকার ও উচ্চতা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিব চতুর্থীর সময় জটেশ্বর মন্দিরে বিশেষ পুজো হয়। বহু ভক্তদের সমাগম হয় এই মন্দির প্রাঙ্গনে।