দেশ বিভাগে ফিরে যান

দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘পারফরম্যান্স’- কেবল প্রচারের চমক, বাস্তবে Big Zero?

July 29, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন। তার আগে নরেন্দ্র মোদী সরকারের পারফরম্যান্সের চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গিয়েছে। আবার বিজেপিও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর সাফল্যকে তুলেধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মূলত ঝড় তুলেছিলেন তিনটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে- কর্মসংস্থান, উন্নতি আর লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানো।

২০১৪ ও ২০১৯ সালে তার বড় বিজয় বড় ধরণের সংস্কারেরও আশা তৈরি করেছিলো। কিন্তু তার অর্থনৈতিক রেকর্ড বলছে তাঁর সাত বছরের প্রধানমন্ত্রীত্ব আসলে হতাশাকেই উস্কে দিয়েছে।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে বলেছিলেন ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হলে বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন। তখন দেশে যত বেকার ছিল মোদী হিসাব কষে দেখেছিলেন বছরে ২ কোটি করে চাকরি পেলে পাঁচ বছরের মধ্যে মোটামুটি সব বেকারের কাজ হয়ে যাবে। বাস্তবে দেখা গেল পাঁচ বছর কাটিয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সব মিলিয়ে ৯ বছর ক্ষমতায় আছেন। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে বছরে ২ লক্ষ বেকারকেও তিনি চাকরি দিতে পারেননি। ফলে দেশে মোট বেকারের সংখ্যা বা বেকারির হার তো কমেইনি উল্টে বেড়েছে। তিনি ক্ষমতায় আসার আগে দেশে যত বেকার ছিল এখন তার থেকে অনেক বেশি। গত ৯ বছরে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তিনি শুধু চরম ব্যর্থতা দেখাননি কর্মরত বা যারা নতুন করে কাজ পেয়েছেন তাদের আয় বা বেতন বাড়েনি বরং অনেক ক্ষেত্রে কমেছে। অর্থাৎ মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে নরেন্দ্র মোদীর জমানায়। পাশাপাশি তাঁর আমলেই মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা স্থায়ী রূপ পেয়েছে। অতীতে কোন কালে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের প্রায় প্রতিটি জিনিস, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের দাম এত উচ্চ হারে বাড়েনি। একদিকে প্রকৃত আয় কমেছে অন্যদিকে জীবনযাপনের ব্যয় বেড়েছে।

এই জাঁতাকলে পড়ে দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানের অবনমন ঘটেছে। লক্ষণীয় সাধারণ মানুষের হাল খারাপ হলে বিত্তবানদের কিন্তু পোয়াবারো। তাদের আয় ও সম্পদ এই সময়কালে বেড়েছে রকেট গতিতে। তাই বিশ্বের কোটিপতি, শতকোটিপতির তালিকায় ভারতের ধনকুবেরদের সংখ্যা বেড়েছে এবং তারা চোখ ধাঁধানো উচ্চতায় নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে মোদী জমানায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন যতটুকু হয়েছে তার সবটাই প্রায় শুষে নিয়েছেন শিল্পপতি ধনীরা।

এমন এক বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করবেন। লক্ষণীয় তিনি কিন্তু বলেননি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি হতে দেবেন না। বলেননি দে‍‌শের একজন মানুষকেও বেকার-কর্মহীন হয়ে বসে থাকতে দেবেন না। সকলের জন্য কাজের ব্যবস্থা করবেন। সত্যি যদি এটা হয় যে অর্থনীতির বৃদ্ধি মানে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আয় বৃদ্ধি তাহলে প্রধানমন্ত্রী অনায়াসে গর্ব করে প্রতিশ্রুতি দিতে পারতেন সব বেকারদের কাজ দেবেন। কিন্তু না, সচেতনভাবেই বলেননি। কারণ তাঁর কল্পিত তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে যথারীতি বেকারদের তথা সাধারণ মানুষের জন্য কিছু থাকবে না।

নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে গত এক দশকে ভারতের অর্থনীতির মূল দুর্বলতার জায়গা হল লগ্নির অভাব। বেসরকারি ক্ষেত্রে যেমন লগ্নি নেই, তেমনই ব‌্যাপকভাবে ধাক্কা খাচ্ছে বিদেশি লগ্নিও। সরকারি তথ‌্য থেকেই জানা যাচ্ছে, গত একবছরে দেশে প্রত‌্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ১৬ শতাংশের বেশি কমেছে। লগ্নি যে দেশে হচ্ছে না, সেটা আপাতদৃষ্টিতেই আমরা সাধারণ মানুষ উপলব্ধি করি। লগ্নি হলে দেশে কল-কারখানা তৈরি হত, চাকরিবাকরির সুযোগ ঘটত। কিন্তু সেসব কিছুই হচ্ছে না। গত এক দশকে দেশে বলার মতো একটাও কলকারখানা তৈরি হয়নি। চাকরির সুযোগ তলানিতে পৌঁছেছে। সরকারি ও বেসরকারি তথ্যতেই দেখা যায়, বেকারত্ব তার শীর্ষবিন্দুতে গিয়ে পৌঁছেছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#employment, #price hike, #PM Modi, #Privatization, #Performance, #Financial Records, #India, #Indian Economy, #unemployment

আরো দেখুন