সোমেন মিত্রের আকস্মিক প্রশ্নের মুখে জোটের ভাগ্য
সোমেন মিত্রের আকস্মিক মৃত্যুতে বড় প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোটের ভবিষ্যৎ। কারণ, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে নতুন করে বামেদের সঙ্গে জোট গড়ে ওঠার নেপথ্যে সোমেন মিত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, মনোজ ভট্টাচার্য, নরেন চট্টোপাধ্যায়দের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেই তিনি জোটকে মজবুত করার কাজ করছিলেন। করোনা মহামারীর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে একদিকে তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর উদ্যোগে, অন্য দিকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সক্রিয়তায় প্রথম বাম ও কংগ্রেসের জোট হয়। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রকাশ কারাট শিবিরের চাপের মুখে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট জোট ভেঙে দেয়। পরে হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে পশ্চিমবঙ্গে জোটের লাইনে সিলমোহর দেয় সিপিএম। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই জোট তৈরি করা যায়নি। আলোচনা মাঝপথেই ভেস্তে যায়। যাদবপুর ছাড়া সর্বত্র বামেদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। সিপিএম প্রার্থী না-দেওয়ায় অধীর চৌধুরী বহরমপুরে এবং আবু হাসেম খান চৌধুরী মালদা দক্ষিণ আসনে কোনও রকমে জয়ী হতে পেরেছিলেন। লোকসভা নির্বাচনের ভরাডুবি থেকে শিক্ষা নিয়েই বাম ও কংগ্রেস নতুন উদ্যমে টানা আন্দোলনের মাধ্যমে পাকাপোক্ত জোট তৈরি করতে ময়দানে নেমেছিল। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও এই জোটে সিলমোহর দেয়। এই নয়া উদ্যোগে সোমেন মিত্রের বড় ভূমিকা ছিল। এখন সোমেনের অবর্তমানে জোট আদৌ টিঁকে থাকবে কি না, তা নিয়েই সংশয় দানা বাঁধছে। সে জন্যই সোমেনের প্রয়াণের পর বিমান বসু বলেছেন, ‘সোমেন মিত্রের মৃত্যুর ফলে প্রদেশ কংগ্রেসের যেমন বড় ক্ষতি হল, তেমনই রাজ্যে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে বামপন্থীদের সঙ্গে কংগ্রেসের যে মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে তারও ক্ষতি হল।’
এই অবস্থায় সূর্যকান্ত মিশ্রের আহ্বান, ‘রাজ্যে বাম গণতান্ত্রিক শক্তি ও কংগ্রেসের ঐক্য গড়ে তোলার অংশীদার ছিলেন তিনি। এই কাজ আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’ সোমেনের প্রয়াণের ফলে জোটে কোনও জটিলতা তৈরি হবে না বলে জানিয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। সোমেনের অসুস্থতার সময়ে তিনিই জোটের সমন্বয় রক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই জোটকে দীর্ঘস্থায়ী ও পাকাপোক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন সোমেন মিত্র। আমাদের তাঁর সেই অভিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। জোটে কোনও সমস্যা হবে না। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের নির্দেশে এই জোট তৈরি হয়েছে। মান্নান, অধীর সবাইকে নিয়েই এই জোটের কাজ আমরা চালিয়ে যাব।’ তবে আপাতত সাত দিন শোক পালনের জন্য কোনও কর্মসূচি করবে না কংগ্রেস।
ঘটনা হল, নাম না-করে কংগ্রেস নেতাদের একাংশের দিকে তোপ দেগেছেন সোমেন-জায়া শিখা মিত্র। কংগ্রেসের কয়েক জন নেতার সমালোচনায় সোমেন মনোকষ্টে ছিলেন বলে শিখার অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘অনেকে সমালোচনা করেছিলেন। সেই সব কথায় মনোকষ্টে ছিলেন। ছেলে বলেছিল, বাবা তুমি পদ ছেড়ে দাও। আমি বলেছিলাম, রাজনীতির মানুষ রাজনীতি ছেড়ে থাকবে কী করে? এখন মনে হয়, দায়িত্ব ছেড়ে দিলেই ভালো হতো। চাপের মধ্যে থাকতে হতো না।’
সোমেনের প্রয়াণের পর কে এখন বিধান ভবনের দায়িত্ব পাবেন, তা ঠিক করবে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। প্রদীপ ভট্টাচার্য, আবদুল মান্নান, অধীর চৌধুরীর মধ্যে কাউকে বেছে নিতে পারেন সনিয়া। যদিও অধীর ও প্রদীপ অতীতে সভাপতি থেকেছেন। আবার মান্নান বিরোধী দল নেতার পদে রয়েছেন। অধীর লোকসভার নেতা। এক নেতা দুই পদে থাকবেন না, এই নীতি কংগ্রেস হাইকম্যান্ড গ্রহণ করলে অধীর ও মান্নানের সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।