দেশ বিভাগে ফিরে যান

শিশুকে মেরে ভিডিও দেখানো হয়েছে মাকে! অচেনা মণিপুরে শিউরে উঠেছিলেন সুস্মিতা

August 1, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ‘এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার ওকি সূর্য নাকি স্বপনের চিতা!’ মণিপুর হিংসা নিয়ে হয়ত এমনটাই বলতে চেয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব। সেখানে গিয়ে যা জানতে পারলেন তাতে শিউরে উঠেছিলেন এই সাংসদ। ভারাক্রান্ত মনে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন তাঁর সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। মণিপুরের কৃষ্ণপুরে মধ্যবয়সী এক যুবক তাঁকে জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকেতেও নিরাপত্তা নেই। শুধু চারিদিকে গুলি চলার আ‌ওয়াজ। ছেলেটি সুস্মিতা দেবকে বলেছিল, ‘ওদিকে গুলি চলেছে, এই দেখুন ভিডিও। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমরা ভিডিও কাউকে পাঠাতে পারছি না। কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে, তারপরও আমাদের নিরাপত্তা নেই!’

সুস্মিতা দেব জানান, মণিপুরে বেছে বেছে টার্গেট করা হচ্ছে মহিলাদের। অথচ এদের রক্ষা করার কোনও সদিচ্ছাই নেই মোদী সরকারের। এই নিয়ে দু’বার মণিপুরে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯ জুলাই আর ২৯ জুলাই এর মাঝের ১০ দিনে মণিপুরে হিংসার পরিস্থিতির কোন‌ও পরিবর্তন‌ই হয় নি বলে তাঁর অভিযোগ। তাঁর প্রশ্ন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুরে গায়ে ৩ দিন থাকলেন। তারপরও কেন শান্তি ফিরল না? তাহলে কি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট থাকে না? এতদিন কেন চুপ কেন্দ্র? সরকার তার মানে গোটা ব্যাপারটাই ধামাচাপা দিতে চাইছে?

মণিপুরের বাসিন্দারা তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে মানেন না। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে হতাশ। শিশু ও মহিলাদের উপর এই নির্যাতন মানবিক ও সামাজিক অবক্ষয় বলে মনে করেন তৃণমূলের এই সাংসদ। নারী নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে তাঁর সংযোজন, এমন ভিডিও আরও আছে। শিশুকে গুলি করে মেরে সেই ভিডিও তার মাকে দেখানো হয়েছে।

সংবাদ মাধ্যমের সাথে সুস্মিতা দেব শেয়ার করেন মণিপুরের মর্মান্তিক পরিস্থিতির চিত্র। তিনি সেখানে দেখেছেন, হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া। রিলিফ ক্যাম্পে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মানুষ রয়েছেন। সেখানকার পর্যাপ্ত বিছানা নেই, পাখা নেই, স্যাঁতসেঁতে মাটিতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছে হাজারো ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। ৫০০-৭০০ জনের বাথরুম মাত্র একটা। ভাতের সঙ্গে দেওয়া তরকারিটা পর্যন্ত মুখে দেওয়া যায় না। গর্ভবতী মহিলারা রিলিফ ক্যাম্পে প্রসব করছেন। কোনও ভ্যাকসিনেশন নেই, বেবি ফুডও দূরঅস্ত। বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে ঝরঝর করে জল পড়ছে। দোকানপাট বন্ধ। ওষুধপত্র এবং নিত্যপণ্যও মিজোরাম থেকে আনাতে হচ্ছে। গাড়ির ভাড়া আকাশছোঁয়া, এয়ারলিফ্ট হচ্ছে না। পাহাড়ের মানুষ উপত্যকায় আসতে পারছে না।

মোদী সরকারকে আক্রমণ করে সুস্মিতা দেবের প্রশ্ন, এই সমস্যার সমাধান কি ইন্টারনেট বন্ধ রাখা? এত অস্ত্রশস্ত্র, বোমা-গুলি… সরকার চাইলে উদ্ধার করতে পারে না?

মণিপুরে নির্যাতিতা মহিলার সঙ্গে দেখা করে তিনি জানতে পারেন, গোটা ঘটনার পিছনে নাকি পুরোটাই রাষ্ট্রের ইন্ধন। পুলিসের সামনে মারা হয়েছে নির্যাতিতার বাবাকে, ভাইকে। পুলিস তাঁদের খুনিদের হাতে তুলে দিয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ কেন মণিপুরে হিংসার সূত্রপাত?

সুস্মিতা দেবের মতে, মণিপুরে প্রশাসনিক কাঠামোটাই ভেঙে পড়েছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার পড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হ‌ওয়ার ঠিক পরেই মণিপুরে গণ্ডগোলের সূত্রপাত। যখনই মণিপুরের সরকার পড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হল, তার ঠিক পরপরই গণ্ডগোল। গণতন্ত্রের উপর আর ভরসা করতে পারছে না মণিপুর সরকার। অপর দিকে গণতন্ত্রের হত্যাকারী সরকারকে মণিপুরবাসী খুব শীঘ্রই বিদায় জানাবে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Sushmita Dev, #Manipur burning, #Manipur on fire, #Manipur Crisis, #Manipur

আরো দেখুন