অনাস্থা বিতর্কে অনুপস্থিত মোদী, কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন রাহুল, কাকলিরা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সংসদে মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের উপর আলোচনা চলছে। কিন্তু এখনও দেখা মেলেনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। যা নিয়ে বুধাবারও সরব হয়েছেন INDIA জোটের সাংসদরা। এদিন লোকসভার অনাস্থা বিতর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অহংকারী রাবণের সঙ্গে তুলনা করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বললেন, রাবণের অহংকারের কারণে লঙ্কা ছারখার হয়েছিল। মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মৌনতা ভাঙাতে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভাষণ দিতে গিয়ে অহংকারের প্রশ্নে তাঁকে গেঁথে রাহুল বলেন, ‘মণিপুরে তিনি ভারতমাতাকে হত্যা করেছেন। তাই আজও মণিপুর যাননি।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম করে রাহুল বলেন, ‘মণিপুরের মানুষকে হত্যা করে আপনারা দেশকে হত্যা করেছেন। মণিপুরকে দুই প্রান্তে ভাগ করে দিয়েছেন। ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতি বন্ধ না করলে ভারতমাতার হত্যা বন্ধ হবে না।’
শাসক দলের উদ্দেশে রাহুল বলেন, ‘সারা দেশে আপনারা ঘৃণা ও হিংসার কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালাচ্ছেন। যেমন আগুন জ্বালিয়েছেন মণিপুর, হরিয়ানায়। দেশপ্রেমের বড়াই করেন আপনারা। কিন্তু আপনারা দেশদ্রোহী।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে রাহুল বলেন, ‘আপনি ভারতমাতার রক্ষক নন। আপনি ভারতমাতার হত্যাকারী। ভারত আমার মা। মণিপুরে সেই ভারতমাতাকে আপনি হত্যা করেছেন। হিংসার রাজনীতি বন্ধ না করলে প্রতিদিন ভারতমাতার নিধন হবে।’
গতকাল মঙ্গলবার মণিপুর নিয়ে আনা অনাস্থা প্রস্তাব বিতর্ক শুরু করার কথা ছিল রাহুলের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল হয়। রাহুল গতকাল কথা বলেননি। আজ বুধবার বিতর্ক শুরু হয় তাঁর ভাষণ দিয়েই। সদস্যপদ ফেরত দেওয়ার জন্য শুরুতেই তিনি স্পিকারকে ধন্যবাদ জানান এবং দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আগেরবার আদানি প্রসঙ্গে এমন কিছু কথা এত জোর দিয়ে বলেছিলাম যে আপনি কষ্ট পেয়েছিলেন। সরকার পক্ষের জ্যেষ্ঠ নেতারাও আহত হয়েছিলেন। সে জন্য আমি দুঃখিত। ক্ষমাপ্রার্থী।’
বুধবার সংসদে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার অনাস্থা প্রস্তাব বিতর্কে অংশ নিয়ে মোদী সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি মুলায়ম সিং যাদবকে উদ্ধৃত করে বলেন, কেবল কাঁদলে হবে না, মহিলা এবং বোনদের ধর্ষক এবং খুনিদের শাস্তি দিতে হবে। তৃণমূল সাংসদ আরও অভিযোগ করেছেন, বিজেপি নির্বাচনে জেতার জন্য সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সমর্থন নিচ্ছে। পাশাপাশি তিনি এদিন গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ এনে বলেন, মণিপুরের পাহাড়ে মূল্যবান খনিজপদার্থের সন্ধান মিলেছে। তাহলে কী নিজেদের ঘনিষ্ট কর্পোরেট সংস্থার হাতে তা তুলে দিতেই মোদী সরকার এই হিংসায় ইন্ধন যোগাচ্ছেন? তিনি আরও বলেন, মণিপুরে পপি’র চাষ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে, এর জন্য দায়ী কে? তিনি বলেন, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলেছেন, অনপ্রবেশকারীরা মণিপুরে হিংসা ছড়াচ্ছে। সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রের, তাহলে তারা কেন এর দায় নেবে না?
এদিন সংসদ টিভির ক্যামেরা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। লোকসভায় অনাস্থা বিতর্কে কথা বলছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য এবং শিল্প মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অনুপ্রিয়া সিংহ প্যাটেল। বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, বিজেপি সাংসদ বা মন্ত্রীরা বলার সময় লোকসভা টিভির ক্যামেরা বক্তার উপর স্থির থাকছে। অথচ বিরোধীরা যখন বলতে উঠছেন, তখন ক্যামেরা ঘুরে যাচ্ছে বক্তার দিক থেকে। তখন সংসদ ভবনের অন্যত্র ঘোরাফেরা করছে লোকসভা টিভির দৃশ্য। লোকসভায় যখন ডিএমকে’র সাংসদ কানিমোজি বক্তৃতা দিচ্ছিলেন অনাস্থা প্রস্তাব বিষয়ের ওপর সেই সময় সাংসদকে কম স্পিকারকেই বেশি দেখানো হচ্ছিলো।
এমনকি এই অধিবেশনে গত ২০ দিনে একবারও ওয়েলে নেমে বিরোধীদের করা প্রতিবাদের দৃশ্যও দেখানো হয়নি সংসদ টিভিতে। আজ রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের সময়ও বারবার সরকার পক্ষের হৈ হট্টগোল দেখানো হচ্ছিলো বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মণিপুর নিয়ে সরকার বিরোধীদের কথা শুনতে রাজি নয়— এই অভিযোগ এনে প্রতিবাদে এদিন রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করল কংগ্রেস। রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল মণিপুর নিয়ে বিশদ আলোচনা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সংসদে আসতে রাজি নন। সরকার বিরোধীদের কথা শুনতে রাজি নয়। তাই প্রতিবাদ হিসাবে আমরা রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করছি।’’
এদিকে বিরোধী জোট ‘INDIA’ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের আচরণে ক্ষুব্ধ। তাদের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থাসূচক প্রস্তাব আনার তোড়জোড় শুরু হল। এই নিয়ে ছয় সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কমিটি সমস্ত সংসদীয় আইন খতিয়ে দেখে এই প্রস্তাবের খসড়াটি তৈরি করবে।
পাশাপাশি রাজ্যসভার নেতা তথা বিজেপি-র মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস জমা দিল বিরোধী জোট ইন্ডিয়া। বিরোধীদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেছিলেন গয়াল।
তবে, রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নোটিস দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সতর্ক ভাবে পা ফেলতে চাইছে ইন্ডিয়া জোট। প্রস্তাবের খসড়া তৈরির জন্য যে কমিটি তৈরি হয়েছে, তাতে রয়েছেন, জয়রাম রমেশ, সুখেন্দুশেখর রায়, বন্দনা চহ্বান, রাম গোপাল যাদব, তিরুচি শিবা, করিম। এই অধিবেশনের শেষ দিনে প্রস্তাবটি আনা হবে কি না, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে।