গেরুয়া বাহিনীর খাপ পঞ্চায়েতে মুসলিম বয়কটের বিরোধীতায় হরিয়ানার কৃষকরা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে হরিয়ানার কৃষকসমাজ। বিজেপি-শাসিত সাম্প্রদায়িক সংঘাত বিদ্ধস্ত এই রাজ্যের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো অতি তৎপর হয়ে উঠেছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর তৎপরতার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধে নেমেছে রাজ্যের কৃষকসমাজ। মুসলমান সমাজকে বয়কটের যে ডাক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো দিয়েছে, তা তারা অগ্রাহ্য করেছে।
শুধু তা–ই নয়, রাজ্যের উগ্র হিন্দুত্ববাদী দুই ফেরার নেতাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে কৃষকসমাজ। এ বিষয়ে তারা রাজ্য সরকারকে স্মারকলিপি দিয়েছে।
কৃষকসমাজ বলেছে, রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে শাসকদলের প্রশ্রয়ে থাকা দুই হিন্দুত্ববাদী নেতাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক।
উগ্র হিন্দুত্ববাদী দুই নেতার একজন মনু মানেসর, অন্যজন বিট্টু বজরঙ্গী। মনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পার্শ্ববর্তী রাজ্য রাজস্থানের দুই যুবককে গরু পাচারের সন্দেহে হরিয়ানায় ধরে এনে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। অভিযোগ, মনুকে ধরতে রাজস্থান পুলিশ হরিয়ানায় এসেছিল। কিন্তু রাজস্থান পুলিশকে সহযোগিতা করেনি হরিয়ানার সরকার।
হরিয়ানার নুহ জেলায় এক ধর্মীয় শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সংঘর্ষ বেধেছিল। অভিযোগ রয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের ভিডিও দিয়ে মনু ও বিট্টু হিংসা ছড়াতে প্ররোচনা জুগিয়েছিল।
নুহ জেলার সংঘর্ষের রেশ হরিয়ানার অন্যত্রও ছড়িয়েছিল। সংঘর্ষের পর রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ। বাড়িঘর, হোটেল ভাঙচুর চালানো হচ্ছে, অন্যদিকে মুসলিম বিরোধী জিগির জোরালো করতে হিন্দুত্ববাদীদের উদ্যোগে কর্মসূচি চলছে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে করে, শত শত মানুষ গত রবিবার গুরুগ্রামের সেক্টর ৫৭-এ একটি ‘হিন্দু মহাপঞ্চায়েতে’ জড়ো হয়েছিল এবং সেখানে মুসলমানদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে বয়কটের ঘোষণা করে। এই সেই এলাকা যেখানে গত সপ্তাহে সাম্প্রদায়িক হিংসার সময় একটি মসজিদে হামলা চালানো হয়েছিল এবং একজন ইমামকে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা হত্যা করেছিল।
এবার এই খাপ পঞ্চায়েতের পাল্টা খাপ পঞ্চায়েতের আয়োজন করছে হরিয়ানার কৃষকরা। তাঁরা মনু মানেসর, বিট্টু বজরঙ্গীদের গ্রাপ্তারের দাবি তুলেছেন। জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষক সংগঠন, কৃষকসমাজ, খাপ পঞ্চায়েত মুসলমান সমাজকে বয়কটের ডাকের বিরোধিতা করেছে। হিসার জেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিশাল ‘মহা পঞ্চায়েত’ হয়। সেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হিংসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে শান্তি রক্ষায় জোটবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেন। রাজ্যের কৃষক নেতারা সর্বত্র বলছেন, সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে সমাজে ভাঙন ধরাতে দেবেন না তাঁরা। কৃষকসমাজের এই প্রতিরোধের ফলও দেখা যাচ্ছে। বেশ কিছু জেলার খাপ পঞ্চায়েত মুসলমান বয়কটের ডাক প্রত্যাহার করে নিয়েছে।