বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

কেমন কেটেছিল শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণর জীবনের শেষ কটা দিন?

August 16, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: তিথি অনুসারে দেশজুড়ে আজ পালিত হচ্ছে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মৃত্যু বার্ষিকী। ১৮৮৫ সালে এই দিনে অনন্তলোকে যাত্রা করেন তিনি। তিনি ছিলে উনবিংশ শতকের এক প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি সাধক, দার্শনিক এবং ধর্মগুরু। তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনের মূলে ছিল গভীর ভক্তি। তাঁর উপলব্ধি সকল ধর্মীয় পথের অন্তর্নিহিত ঐক্য ও সম্প্রীতিকে চিনতে সাহায্য করেছিল। জীবনের শেষ কটা দিন অনেক কষ্টে কেটেছিল তাঁর।

শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শ্রীশ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব। দিনটি ছিল রবিবার। জানা যায়, ১৮৮৫ সালে রামকৃষ্ণ পরমহংসের গলা থেকে প্রথম রক্তক্ষরণ হয়। চিকিৎসক জানান, তিনি ক্লার্জিম্যানস থ্রোট রোগে আক্রান্ত। এরপর শুরু হয় চিকিৎসা। প্রখ্যাত চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার তাঁকে দেখতে আসেন ১৮৮৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর। পরের মাস থেকে শুরু হয় চিকিৎসা। তারপরই চিকিৎসক বলেন রোগটি ক্যান্সার। কলকাতার শ্যামপুকুর অঞ্চলে তাঁকে নিয়ে আসা হয়। অবস্থা সংকট জনক হলে ১৮৮৫ সালে ১১ ডিসেম্বর তাকে স্থানান্তরিক করা হয় কাশীপুরের এক বাগান বাড়িতে। সেখানে ২৫ মার্চ ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. জে এম কোটস এসেছিল তাঁকে দেখতে। বিখ্যাত ডাক্তার রাজেন্দ্রনাথ দত্ত আসেন ১৮৮৬ সালে ৬ এপ্রিল। চিকিৎসক তাঁকে কথা না বলার নির্দেশ দেন। কিন্তু, তিনি সে কথা অমান্য করেন।

মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত লিখেছেন, ঠাকুর ১০ মাস ধরে ভুগেছিলেন, গলায় ঘা হয়েছিল, ভক্তেরা সেবা করে পরিশ্রান্ত, ‘‘ডাক্তারের হাত ধরে কাঁদতেন, ভাল করে দাও বলে’’ এবং শেষকালে বলতেন, ‘‘মা আমার শরীর রাখবেন না।’’ কথামৃত-য় শেষ বিবরণ ২৪ এপ্রিল ১৮৮৬।

ধীরে ধীরে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে। শেষে শ্রাবণের শেষ দিনে ১৮৮৬ সালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অভেদানন্দের বর্ণনা অনুযায়ী, ডা. সরকার ‘‘বেলা দশ ঘটিকায় এসে নাড়ি দেখে বলেন, ঠাকুরের প্রাণবায়ু নির্গত হয়েছে।’’ স্বামী প্রভানন্দের মতামত, ‘ডাক্তার সরকার কাশীপুর পৌঁছান বেলা একটায়।’

ডাক্তার সরকারের দিনলিপি, ‘‘খাওয়াদাওয়ার পর প্রথমে ডাফ স্ট্রিটে যাই এক রোগিণীকে দেখতে, তারপর পরমহংসের কাছে। তিনি মৃত। গত রাত্রে একটার সময় তাঁর দেহাবসান হয়েছে, He was lying on the left side legs drawn up, eyes open, mouth partly open,…।’’

জানা যায়, শেষ দিনে শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ ভাতের পায়েস খেয়েছিলেন। সেদিনে তিনি বলেছিলেন, ‘ভিতরে এক ক্ষিধে যে হাঁড়ি হাঁড়ি খিচুড়ি খাই, কিন্তু মহামায়া কিছুই খেতে দিচ্ছেন না।’ তার পর ঠাকুর নাকি বলেন, ‘আঃ শান্তি হল। এখন আর কোনও রোগ নেই।’

শেষের সেই দিনে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ভক্ত শশী (স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ) ডা. নবীন পালকে ধরে নিয়ে এলেন। ঠাকুর বললেন, ‘‘আজ আমার বেশ কষ্ট হচ্ছে।’ ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘সারবে?’’ ডাক্তার নিরুত্তর। এক সময় ঠাকুর ভক্তদের বললেন, ‘‘একেই নাভিশ্বাস বলে।’’

অভেদানন্দের বর্ণনায় উল্লেখ আছে, ১৮৮৬ সালে শ্রাবণের দিন তিনি সকাল ১০টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এদিন সকালে তাঁকে ডাক্তার দেখতে এসে জানান, তিনি প্রয়াত হয়েছে। ১৬ অগস্ট সকালবেলায় ডা. মহেন্দ্রলালা সরকার কাশীপুরে আসেন। ‘বেলা দশ ঘটিকায় এসে জানান, ঠাকুরের প্রাণবায়ু নির্গত হয়েছে।’

স্বামী প্রভানন্দ তাঁর ‘শ্রীরামকৃষ্ণের অন্ত্যলীলা’ বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডে (প্রথম প্রকাশ আষাঢ় ১৩৯৪) সরকারি নথি থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন:
রাম কিষ্টো প্রমোহংশ
৪৯ কাশিপুর রোড্, বয়স ৫২
মৃত্যু তারিখ- ১৫ আগস্ট ১৮৮৬
সেক্স-পুরুষ, গতি ব্রাহ্মণ
পেশা- ‘প্রিচার’
মৃত্যুর কারণ-গলায় আলসার

বিকেল ৬টা নাগাদ কাশীপুর মহাশ্মশানের উদ্দেশ্যে তাঁর শেষ যাত্রা শুরু হয়েছিল, । সেখানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মাত্র ৫০ বছর বয়সে প্রয়াত হন শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Ramakrishna, #Ramakrishna Paramahansa, #death anniversary

আরো দেখুন