বেঙ্গল কেমিক্যাল – স্বদেশির আবেগে বাঙালির উদ্ভাবনী বার্তা
১৮৯২ সালে অধ্যাপক প্রফুল্লচন্দ্র রায় ৯১ আপার সার্কুলার রোডে বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্দেশ্য ছিল, গবেষণাগারে বিভিন্ন সময় পরীক্ষা করে তিনি ও তাঁর ছাত্ররা দেশি গাছ–গাছড়া থেকে যে সব ওষুধ তৈরি করেন, তা হাতেকলমে করে বাজারে বিক্রি করে সাধারণ মানুষের কতটা উপকার হয় তা দেখা।
এ সব ওষুধ তৈরির জন্য অ্যাসিড তিনি পেতেন কাশীপুর কেমিক্যাল ওয়ার্কস থেকে, যার প্রধান গবেষক ছিলেন ডেভিড ওয়ালডি বলে এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। এটির প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৭৮ সালে।
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠার আগে বড়বাজারে খ্যাংরাপট্টিতে বটকৃষ্ণ পাল অ্যান্ড কোম্পানিতে খোঁজ নেন ভারতে কোন অ্যাসিড, কোন অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ কেমন চলে। ১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বটকৃষ্ণ কোম্পানির তথ্যের ভিত্তিতে তিনি ওষুধ বানাতে শুরু করেন।
শুরুতে কর্মীর সংখ্যা ছিল সামান্যই। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় প্রথমে ডা. অমূল্যচরণ বোস এবং ১৯০১ সালে ডা. কার্তিকচন্দ্র বোস ও সতীশ সিনহা যোগ দেওয়ার পর, এটি একটি লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়।
বঙ্গভঙ্গের বছর অর্থাৎ ১৯০৫ সালে মানিকতলায় কারখানাটি উঠে আসে এবং ১৯০৭ সালে সালফিউরিক অ্যাসিড বানানো শুরু হয়। ১৯০১–এ পেইড মূলধন ছিল ২৩,৫০০ টাকা এবং ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দ্বিতীয় বছরে ওই মূলধন বেড়ে হয় ৪ লাখ। পানিহাটি কারখানা গড়ে ওঠে ১৯২২ এবং কোল টার ডিসটিলেশন প্ল্যান্ট ওই বছরই শুরু হয়।
১৯০৮–এ কর্মী সংখ্যা যেখানে ছিল মাত্র ৭০ জন, ১৯২৬–এ তাই বেড়ে হয় ১৪০০। রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের বয়স তখন ৬৫ বছর। কিন্তু অদম্য প্রাণশক্তি। বায়োলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট খুললেন ১৯২৯–এ, ১৯৩১–এ গ্ল্যান্ড প্রোডাক্টস। ভিটামিন উৎপাদন শুরু হল ১৯৩২ এবং ২ বছর পর সাবান ও কালি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঙ্গল কেমিক্যালের বিপুল আয়ের মুখ দেখে।
কিন্তু স্বাধীনতার পর পুঁজির অভাবে, শ্রমিক আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার বেঙ্গল কেমিক্যালকে সরকারি সংস্থা হিসেবে অধিগ্রহণ করে।