গ্রামীণ সাংবাদিকতার জনক কাঙাল হরিনাথকে কি চেনে আজকের বাঙালি?

জমিদার, নীলকর সাহেব, মহাজন ও পুলিশের অত্যাচারের কাহিনি তিনি তাঁর সংবাদপত্রে প্রচার করে গিয়েছেন।

August 23, 2023 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
গ্রামীণ সাংবাদিকতার জনক কাঙাল হরিনাথকে কি চেনে আজকের বাঙালি?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ‘আমরা হরিনাথের বন্ধু’-এই কথা বলে; গানের পদে দেহতত্ত্বের চর্চা করা সাধকরা ঘিরে ধরেছিল শিলাইদহের জমিদারবাড়ি। লালন সাঁইয়ের মাজার থেকে রণপা পরে আসা সাধকদের দেখে চমকে গিয়েছিল সকলে, তাঁরা কাঙালকে উদ্ধার করতে এসেছিল। কাঙাল ছিলেন তাঁদের বন্ধু। সংবাদপত্রর পাতায় কাঙাল জমিদারদের অত্যাচারের পর্দা ফাঁস করেছিলেন। শিলাইদহের জমিদারদের অত্যাচার ও নিপীড়নের সাক্ষী ছিলেন তিনি। তাঁর সংবাদপত্রে দ্বিধাহীন ভাষায় ঠাকুরবাড়ির প্রজাবিরোধী অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন তিনি। কাঙাল হরিনাথ লিখেছিলেন, ‘দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহর্ষি হওয়ার পূর্বে প্রজাদের দুঃখ নিবেদনের সংবাদ তাঁর কিছুটা কর্ণগোচর হলেও মহর্ষি হওয়ার পর প্রজার হাহাকার তাঁহার কর্ণে প্রবেশ করিতে অবসর পায়নি।’ প্রচলিত ইতিহাস থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথের আগে ঠাকুর পরিবারের যে’সব সদস্য জমিদার হিসেবে শিলাইদহে এসেছিলেন, তাঁরা প্রজাবৎসল ছিলেন না। অত্যাচারের কথা হরিনাথ গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকায় সাহসের সঙ্গে লিখতেন। শাসক, শোষিত আর শোষণের পর্দা ফাঁস করে হয়ে উঠেছিলেন গ্রাম-বাংলার স্বর। কাঙাল হরিনাথই ছিলেন ভারতের গ্রামীণ সাংবাদিকতার প্রানপুরুষ, তিনিই ছিলেন গ্রামীণ সংবাদিকতার প্রথম সফল কাণ্ডারী। পীত সাংবাদিকতার যুগে, তাঁকেই বেশি করে স্মরণ করা দরকার।

কাঙাল চলে গিয়েছেন ১৮৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল, আজও তিনি প্রাসঙ্গিক। মানুষটির আসল নাম হরিনাথ মজুমদার। তাঁর ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ ছিল গ্রামজীবনের কণ্ঠস্বর। হরিনাথ জন্মেছিলেন পাবনা জেলার কুমারখালি গ্রামে, ১৮৩৩ সালে। ঠাকুরবাড়ির জমিদারির অন্তভুর্ক্ত ছিল কুমারখালি। খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছিলেন তিনি। এতটাই দরিদ্র ছিলেন যে পরনের বস্ত্র পর্যন্ত ছিল না। কুমারখালির নীলকুঠিতে কিছু দিন নীলকর সাহেবের কাছে কাজ করেছিলেন তিনি। যদিও নীল চাষিদের উপর অত্যাচার দেখে তিনি সে কাজ ছেড়ে দেন। তারপর গ্রামীণ সাংবাদিকতা শুরু করেন। মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত সেটাই করে গিয়েছেন। স্ত্রী-শিক্ষার জন্য সংগঠন তৈরি করেছিলেন তিনি। সংবাদপত্রে তিনি মেয়েদের ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের দাবি তুলে ধরে গিয়েছেন। বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপ গৃহে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৮৫৮ সালে এই বালিকা বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

জমিদার, নীলকর সাহেব, মহাজন ও পুলিশের অত্যাচারের কাহিনি তিনি তাঁর সংবাদপত্রে প্রচার করে গিয়েছেন। গ্রামীণ সংবাদপত্রে সতীদাহর বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। হরিনাথ গানও লিখতেন। ১৮৬৩ সালে তিনি প্রকাশ করেন গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা, নামের মাসিক পত্রিকা। যদিও এরপর গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশিত হয়। গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিত হত কলকাতার গীরিশ বিদ্যারত্ন প্রেস থেকে। ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রর পিতা হরিনাথের বন্ধু মথুরনাথ মৈত্র মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মুদ্রণযন্ত্রটি হরিনাথকে দান করেন। ১৮৭৩ সাল থেকে ওই যন্ত্রেই গ্রামবার্ত্তা ছাপা হতে থাকে। ২৫ বছর ধরে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছিল।

কাঙাল হরিনাথ ও লালন সাঁই

সত্য প্রকাশের শাস্তি। জমিদার, মহাজনদের রোষে পড়েছিলেন কাঙাল। জমিদারদের হামলা থেকে লালন সাঁই ও তাঁর অনুসারীরা হরিনাথের বাড়িতে এসে পাহারা দিয়ে তাঁকে রক্ষা করেন।


ফকির লালন সাঁইয়ের সঙ্গে হরিনাথের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা ছিল। হরিনাথ নিজেও ছিলেন আধ্যাত্মিক সাধক, তিনি ‘কাঙাল ফকির চাঁদ বাউল’ নামেও পরিচিত ছিলেন। বহু গান লিখেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮। তাঁর লেখা, বিজয় বসন্ত উপন্যাসটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। উপন্যাসটি ২০টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen