এলআইসিতে গচ্ছিত টাকা কতটা সুরক্ষিত?
জীবন বীমা নিগম নিয়ে কেন্দ্রীয় বাজেটের পর থেকেই বিভ্রান্তি সারা দেশে। ছড়াচ্ছে মানুষের মধ্যে আশঙ্কা। কেন্দ্রীয় বাজেটে জীবনবীমার শেয়ার বিক্রীর সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই ক্লায়েন্টদের ফোনে নাজেহাল এজেন্টরা। সকলের একটাই প্রশ্ন, তাদের গচ্ছিত টাকা সুরক্ষিত কিনা?
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন এলআইসির বেসরকারীকরণ হচ্ছে না, সামান্য বিলগ্নীকরণ হচ্ছে। গ্রাহকদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এদিকে বীমা এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী সংগঠনের তরফে এটাকে বেসরকারীকরণের প্রথম ধাপ বলা হচ্ছে এবং আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তারাও জানিয়েছে আমানতকারীদের চিন্তার কিছু নেই।
শুধু লাইফ ফান্ডে যা টাকা আছে, সেটা দিয়েই আমানতকারীদের সমস্ত টাকা ফেরত দেওয়া যায়। বাজারে শেয়ার সরকারি তেল সংস্থাসহ অনেকের আছে। তবে প্রধানমন্ত্রী বীমা সুরক্ষা যোজনার মতো সরকারি নানা জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি যা জীবনবীমা নিগমের মাধ্যমে আনা হয়, তা আর কতটা সম্ভব হবে, প্রশ্ন সেখানেই।
জীবনবীমা নিগম বেসরকারি হাতে যাবে বলে কয়েক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছিল। বিশেষত যখন এনপিএ বা অনাদায়ী ঋণের অঙ্ক ৩০ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়ে ফেলে, তখন সেই সম্ভবনা আরও প্রবল হয়। এবার বাজেটে কি সেই সম্ভবনায় সিলমোহর দিল? বিভ্রান্তি এই নিয়েই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেটে যাই ঘোষণা হোক, ১৯৫৬ সালে সংসদে পাস হওয়া এলআইসির নিজস্ব আইন বলছে এভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, পাস করাতে হবে সংসদের উভয় কক্ষেই। সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সরকারের পক্ষে সেটা পাস করানো সেরম কঠিন কাজ না।
আইনের জটিলতায় না পড়ে মূল আলোচ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বীমাকারীরা টাকা ফেরত পাবে তো? এক কথায় উত্তর সমস্যা নেই। জীবনবীমা নিগমের নিজস্ব লাইফ ফান্ডেই আছে ২৯ লক্ষ কোটি টাকা। যা দিয়ে সব বীমাকারীর টাকা ফেরানো যায়। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ২ কোটি ১৪ লক্ষ নতুন পলিসি হয়েছে। ২ কোটি ৬০ লক্ষ পলিসি হোল্ডার টাকা ফেরত পেয়েছেন। তাও প্রশ্ন উঠছে শেয়ার হোল্ডারদের হাতে নিয়ন্ত্রণ গেলে জীবনবীমা নিগমের ধারাবাহিকতা ও সুনাম অক্ষুণ্ণ থাকবে কিনা।
সারা ভারত বীমা কর্মচারী সমিতির পূর্বাঞ্চলের নেতা প্রদীপ গড়্গড়ি বলেন, সরকারকে টাকা যোগাচ্ছে এলআইসি। নানা সামাজিক প্রকল্প সরকার করছে এলআইসির কাঁধে ভর করে। সরকারের হাতে নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই তা সম্ভব। শেয়ারহোল্ডাররা তা নাও করতে দিতে পারেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৪ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে এক ঘন্টা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচী নিয়েছি।