লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আনতে চাইছে মোদী সরকার, জোর জল্পনা রাজনৈতিক মহলে
অতীতে বাজপেয়ী জমানায় একবার ভোট এগিয়ে এনেছিল বিজেপি।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সেমিফাইনালের ফলাফল ভালো হলে ফাইনালের দিনক্ষণ এগিয়ে আনতে পারে মোদী সরকার এরকমটাই মনে করছে অনেকে। সামনেই রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি ও বিরোধী, উভয় শিবিরের কাছেই এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিধানসভা নির্বাচনে যদি বিজেপি ভাল ফল করতে পারে তাহলে লোকসভা ভোট এগিয়ে আনতে পারে। তাহলে বছরের শেষ থেকে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দেবে বিজেপি।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেরকমই ইঙ্গিত দিলেন। এদিন TMCP-র সভা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আনার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “দুদিন বাদে লোকসভা ভোট রয়েছে। আমার তো সন্দেহ যে ডিসেম্বরে ওরা ভোট করে দিতে পারে। জানুয়ারিতেও হতে পারে। ওদের কোনও বিশ্বাস নেই!”
মমতা দাবি করেন, প্রচারের জন্য বিজেপি সমস্ত হেলিকপ্টার ইতিমধ্যে বুক করে নিয়েছে। হেলিকপ্টার প্রচারের কাজে লাগানো হতে পারে। সেই অনুমান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অনুমান করেছেন বলে জানা যাচ্ছে।
অনেকের মতে, মমতার এ কথা বলার দুটো কারণ থাকতে পারে। এক, তিনি দলের নেতা কর্মীদের এখন থেকে লোকসভা ভোটের জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে বলছেন। দুই, তিনি সত্যিই হয়তো আশঙ্কা করছেন যে লোকসভা ভোট এগিয়ে আনতেই পারে বিজেপি। কারণ, অতীতেও বিজেপি তথা এনডিএ সরকার তা করেছে।
চার রাজ্যের ভোটে বিজেপির ফল খারাপ হলে দেশ জুড়ে মোদী বিরোধী হাওয়া তুলতে আরও ঝাঁপিয়ে পড়বেন রাহুল-মমতারা। পর্যবেক্ষকদের মতে, হয়তো সেই কারণেই এই সাত-পাঁচ সন্দেহ শুরু হয়েছে। আরও একটা ব্যাপার এখানে তাৎপর্যপূর্ণ। তা হল, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগড়ে বিধানসভা ভোটকে বরাবরই লোকসভা ভোটের আগে সেমিফাইনাল বলে ধরা হয়। কিন্তু এবার সামগ্রিক পরিবেশ যেন তেমন নয়। বিজেপির প্রস্তুতি ও প্রচারের বিষয়বস্তু থেকে মনে হচ্ছে যেন, লোকসভারই প্রচারে নেমে পড়েছেন তাঁরা।
অতীতে বাজপেয়ী জমানায় একবার ভোট এগিয়ে এনেছিল বিজেপি। ২০০৩ সালে লোকসভা ভোটের আগে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগড়—এই তিন রাজ্যেই ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে পরাস্ত করে বিজেপি ক্ষমতা দখল করেছিল। সেই ফলাফল দেখে অটল বিহারী বাজপেয়ী পর্যন্ত এত উৎসাহী হয়ে যান যে তাঁরা মনে করেন লোকসভা ভোটে তাঁরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবেন। ডিসেম্বরে তিন রাজ্যের ভোটের ফল প্রকাশের পর জানুয়ারি মাসে হায়দরাবাদে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক ডাকা হয়। তার পর লোকসভা ভোট এগিয়ে আনা হয় এপ্রিলে। তবে সে ভোটের ফলাফল বিজেপির জন্য ভাল হয়নি।
রামমন্দির আগামী বছরের জানুয়ারিতে উদ্বোধন হবে। আর দ্বিতীয়ত ১০ লক্ষ চাকরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এবার সেমিফাইনালে ফল ভালো হলে লোকসভা ভোটে এই দু’টি বিষয়কেও প্রচারে তুলে ধরা হবে। এক বলা হবে, ‘রামমন্দির ওহি বানায়েঙ্গে’ স্লোগান কার্যকর করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত প্রচার হবে, বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। এই চাকরি দেওয়ার প্রবণতা বজায় থাকবে। আর চন্দ্রযান-৩ কেও মোদীর সাফল্য হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে। চব্বিশের ভোটে বিজেপি বিরোধী সম্মিলিত INDIA জোট গঠিত হয়েছে। শুরু থেকেই এই বিরোধী যথেষ্ট চাপে রেখেছে বিজেপিকে। এই সপ্তাহেই ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক বসছে মুম্বইয়ে। কোনওভাবে যাতে বিরোধীরা সুবিধা নিতে না পারে, তার জন্য ভোট এগিয়ে আনা হতে পারে।
যদিও বিজেপির শীর্ষ স্তরের মধ্যে একটি দ্বিধাও কাজ করছে। ২০০৪ সালে ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’ স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। সেই স্লোগানের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই লোকসভা ভোট এগিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে পরাস্ত হয়েছিল অটলবিহারী বাজপেয়ির এনডিএ। এবারও নরেন্দ্র মোদী অমৃতকাল আখ্যা দিয়ে প্রচারে নেমেছেন। তাই ভোট এগিয়ে আনা হলে আবার ২০০৪ সালের বিপর্যয় হবে না তো? চলছে জল্পনাও।